দিন বদলাচ্ছে








গতকাল ট্রেনে যাচ্ছি। এমনিতেই অফিস টাইমের ট্রেনে বসার জায়গা পাওয়াটা রীতিমত চাপের। যথারীতি চ্যানেলে দাঁড়িয়েই আছি। আমার সামনে দুজন আদিবাসী মহিলা বসে ছিলেন। একজন সম্ভবত মালার ব্যবসা করেন, অন্যজন ফলের। ওদের কথা শুনে বুঝলাম হাওড়া যাচ্ছিলেন। বেশ পরিষ্কার বাংলায় কথা বলছিলেন। একজন বললেন, তা তোর সোয়ামী যখন এত বার তোকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে, তখন চলেই যা তার ঘরে। দুদিন একটু সুখ ভোগ করে নে। কম কষ্ট তো করলি না!▪

ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন, যখন পথ ঘাট চিনতাম না, ভয় পেতাম রাতের অন্ধকারে, অচেনা মানুষকে, যখন ওর পায়ে পায়ে ঘুরতাম তখনই যখন তাড়িয়ে দিলো, কোলেরটাকে নিয়ে রাস্তায় নামলাম....এখন আর কি দরকার বলো? চলছে তো, চালিয়ে তো নিচ্ছি নিজের আর মেয়েটার পেট।

আরেকজন বললেন, মেয়েটা বড় হচ্ছে, লোকে তো বাপের কথা জিজ্ঞেস করবে, তখন কি বলবি?•

ভদ্রমহিলা একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, এই যে সরস্বতী ঠাকুর একা আসেন, কই তাকে তো লোকে তার সোয়ামীর কথা জিজ্ঞেস করে না।° বেশ জাঁকজমক করে তো লোকে পুজো করে সোয়ামী ছাড়াই। তাহলে আমি একা থাকলে কেন লোকে আমায় জিজ্ঞেস করবে? আমি তো কারোর কাছে হাত পাতছি না, কারোর দুয়ারে গিয়ে পড়েও নেই, তাহলে অসুবিধে কোথায়! আমি কি একা থাকতে পারি না?°

যে একবার পথে বের করে দিয়েছিল, সে যে আবার তাড়িয়ে দেবে না তার ভরসা কোথায় গো! ফলের দোকানটা দাঁড় করিয়েছি এই তিনবছরে, আর একূল অকূল দুকূল যেতে দেব না দিদি। মেয়েটাকে মানুষ করে তারপর বিয়ে দেব। মা সরস্বতীর মত মানুষ করবো, যেন একা থাকলে কেউ তার সোয়ামীর কথা না জিজ্ঞেস করে।

আমার ঠোঁটের কোণে অজান্তেই একটুকরো হাসির রেখা দেখা দিয়েছিল বোধহয়। বদলাচ্ছে, মানসিকতা বদলাচ্ছে, এই তো ঋজুতা ফিরে আসছে ভাঙা শিরদাঁড়াগুলোতে। দুর্বলতা কেটে শক্ত হচ্ছে মনগুলো। এটুকুই শান্তি। পড়ে পড়ে আর মার খাবে না অন্তত এরা।°

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন