ভালোবাসার গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ভালোবাসার গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ইভা

 

ইভাকে অতো আদর করে কথাটা বললাম। সে আমাকে পাত্তাই দিলো না। চোখমুখ শক্ত করে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিলো। আমি স্পষ্ট চোখে চাইলাম তার দিকে। ভারি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি না। বিবাহ বহির্ভুত বড় সাধের সম্পর্ক তার সাথে। ঘরে থাকা শশীর সাথে চি ট করছি প্রতিনিয়ত। সব তো ওই ইভার জন্যই! এই স্যাক্রিফাইসের মূল্য যদি সে বুঝতো! 

এগিয়ে এসে ইভার চুলে হাত বুলিয়ে দিলাম। ও আমার বুকে ধাক্কা দিলো। খুব নাকি ঢং করছি! একটা সিগারেট ধরিয়ে ইভা খোলা জানালার এক কোণায় কনুই রেখে কায়দা করে টানতে থাকে। টেবিলে রাখা ভদকার আধ খাওয়া বোতল। বিছানা এলোমেলো। আমাদের ওসব হয়ে টয়ে গেছে। এর মাঝে শশী বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। আমার রাগ হচ্ছে শশীর উপর। তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে। এখনো অতো আদর্শ গিন্নী সেজে ঘন ঘন খোঁজ নেবার কী দরকার তোর? সারাক্ষণ একটা ছোকছোক করা সন্দেহ মনে পুষে রাখে। দুদন্ড স্বস্তি দেবে না! 

ইভার সাথে মনোমালিন্য আমার সতী সাবিত্রী গিন্নীকে কেন্দ্র করেই। ইদানীং ইভা নাকি গিল্টি ফিল করে। একটা লক্ষ্মী মেয়েকে নাকি তার কারণে নাকি আমি প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে যাচ্ছি! আমার প্রতিটা চুমুতে নাকি প র কী য়া র স র্ব না শা ঘ্রাণ পায় সে। আমি তাকে বোঝাতে পারি না, ওসব সস্তা মূল্যবোধের ধার না ধেরে সময়টাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলে কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না। গুগল ঘেঁটে তাকে রেফারেন্স দেখাই। সেখানে কিছু আর্টিকেলে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যাসহ লেখা আছে, মানুষ জন্মগতভাবেই ব হু গা মী! 

দু’ভরি পিওর গোল্ডের গহনা কিনে দেবার পর ইভার মনটা নরম হয়। হাসকি ভয়েজে বলে, ওই মা গী যদি নিজের বরকে সামলে সুমলে রাখতে না পারে, তবে তো কোনো নি ম্ফো ম্যা নি য়া কে র ভোগে যাবেই! আমি ওর অসংলগ্ন আদুরে কথা শুনে খিকখিক করে হাসি। জীবনটাকে আমার বড় মধুর মনে হয়। দামী মদকে মনে হয় মায়ের শাড়ির আঁচলে শৈশবের বাটি ছাঁট করা চুল মুছিয়ে দেয়া মমতার মতো। আমার ঘোর কাটায় শশীর একের পর এক অভিমানমাখা মুঠোফোন বার্তা।  

রাত করে বাড়ি ফিরি। পিঠ খোলা ব্লাউজ পরেছে আদর্শ গিন্নী। আরে যতোই খোলামেলা হও, ওসব থলথলে চর্বিযুক্ত হাতির পিঠে ক্লান্ত আমি চড়বো ভেবেছো! কথা কাটাকাটির মাঝখানে দুমদুম কয়েকটা কিল বসিয়ে দেই। ও পিঠখোলা জায়গাটা দেয়ালে ঠেসে ধরে বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। গায়ে এর আগে হাত তুলিনি। আজ আমাদের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী। টেবিলে সাজিয়ে রাখা কয়েক পদের খাবার বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে। সাধ করে রেধেছিলো সে।

ইভার কাছে থাকার সময় শশী যতোবার মুঠোবার্তা পাঠিয়েছে, একবারও অ্যানিভার্সারির কথা জানায়নি আমাকে। আমি তো বুঝি। ওসব ওর স র্ব না শা জে দ আর ই গো! যেন আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই। পৃথিবীর যাবতীয় খুঁটিনাটি তুচ্ছ বিষয়াদি মনে করে বসে থাকবো। আমার সামনে কাঁদবে না বলেই হয়তো শশী ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে ওঠে সে। আমার খুব ইচ্ছা করে, লাঠিগোছের শক্ত কিছু একটা দিয়ে কয়েকটা ঘা বসাই জায়গামতো। আমার সাথে ন্যা কা মি! আমার চরিত্র নিয়ে বাসায় ঢুকবার সাথে সাথেই বেশ কিছু কথা শুনিয়েছে সে। এখনো মাথায় আগুনের দাপাদাপি থামেনি। 

আমি অবচেতনভাবে নেটে খুঁজি খুন করে লাশ গুম করে ফেলার কার্যকরী উপায়গুলো। কোনোটাই মনে ধরে না। পোহাতে ইচ্ছা করে না এতো ঝক্কিঝামেলা। মা ল টা কে ডি ভো র্স দিয়ে দিলে কেমন হয়? আমি ইভাকে উইল ইউ ম্যারি মি কথাটা লিখে কয়েকটা চুমুর ইমো অ্যাড করছি, এমন সময় সাইড টেবিলে রাখা ফাইলটা চোখে পড়ে। নিতান্ত হেলায় ভরে সেটাকে হাতে নিই। ঠিক মেরুদন্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়। একটা কাগজে অনেক কিছুর ফাঁকে স্পষ্ট করে লেখা, শশী সন্তানসম্ভবা। 

আমি মেসেঞ্জারে টেক্সটটা তবু ইভাকে পাঠিয়েই দেই। দেখি না সে কি বলে! 

গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাই ব্যালকনির দিকে। শশীর বাঁধভাঙা শোকের প্রকোপ কমেছে। ফর্সা পিঠের দু তিন জায়গা লাল হয়ে আছে। ছোটবেলায় শেখা মার্শাল আর্ট এই প্রথম বোধহয় কাজে লাগলো। তবু আমি মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলাম। যাহ্‌… ব্যাপারটা বোধহয় বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো! 

ও কেঁদেকেটে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আমি স্যরি বলবো কিনা ভাবছি। এমন সময় ইভা টেক্সটের রিপ্লাই করে। কোনোভাবে ইভা আর শশীর যোগাযোগ হয়েছে। সেই সুযোগে খুব সম্ভবত শশী মা হবার ট্রাম্পকার্ড ছেড়েছে বরকে একান্ত নিজের করে নেবার জন্য। আর ইভা গিল্টি ফিলিং এর দোহাই দিয়ে সম্পর্ক গুটিয়ে নেবার ফাঁকে শেষ লাইনে আমাকে উত্তর দিয়েছে, আমি একজন মোটা দাগের অমানুষ! 

খুব প্রতারিত মনে হয় নিজেকে। অসহায় লাগতে থাকে। নিজে থেকেই শশীর পিঠে কয়েকটা চুমু খাই। হাত ধরে ওকে বেডরুমে নিয়ে আসি। ওর কোমর দু’হাতে জড়িয়ে পেটে কান রেখে কিছু একটা শোনার ভান করে কালক্ষেপন করি। কাঁপা গলায় বলি, আমাকে ক্ষমা করে দিতে। শশী দেখলাম হাসছে। মেয়েটা মা হবার আনন্দে খানিকটা এলোমেলো হয়ে গেলো নাকি! আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার অদ্ভুত হাসিটা থামবার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকি। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেই সাইড টেবিলে চোখ পড়ে আবারো। সেখানে যত্নসহকারে আরেকটা ফাইল রাখা আছে। 

আমি বুঝতে পারি ওটা কীসের আবেদনপত্র। অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে আমার। এই মেয়েটার সাথে আমার জীবনের অদ্ভুত সুন্দর কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠি আমি। শশীর দু পা জড়িয়ে ধরে কাঁদি শিশুর মতো। নিজেই চমকে উঠি, অতোটা বিশুদ্ধ আবেগ ওর জন্য আমার ভেতর এতোদিন লুকিয়ে ছিলো!

লেখক ঃ Taimoor Mahmud Shomik-

একা না দোকা

"আর আমি একা পারছিনা দীপ, এবার বিয়েটা কর। বয়স তো অনেক হল। তোর বয়সী সবাই বিয়ে করে বাবা হয়ে গেছে। অফিসে যাদের সাথে থাকিস তারাও তোর থেকে ছোট হয়ে বৌ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে।"

"উফ্, মা সব সময় বিয়ে বিয়ে কোরো না তো। বিয়ে মানেই তো স্বাধীনতা শেষ। খালি দোকান, বাজার আর কুলিগিরি করা। তার থেকে এই ভালো আছি।"

"৩৯ বছর বয়স হল তোর। সেটা খেয়াল আছে? আমি আর কত দিন!"

"বাজে কথা না বলে যাও টিভি দেখ।"

 রাতে ব্যাগ গুছিয়ে শুতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে দীপের। কাল অফিসের বন্ধুদের সাথে পুরী ঘুরতে যাবে। বন্ধু না বলে ভাই বললেই ভালো হয়। সবাই ওর থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট। কিন্তু একসাথে চাকরি করে বলে বন্ধু বলেই পরিচয় দেয়। ওরাও দাদা না বলে নাম ধরেই ডাকে। ইয়ার্কি, ফাজলামো বন্ধুদের মতোই হয়।

 তিনদিনের ট্যুর। জিনিস খুবই কম। তবু নিজে গোছাতে একটু সময় লেগে গেল। মাকে বলতে পারত। কিন্তু তাতে ওখানে গিয়ে অসুবিধেতে পড়তে হত। কি দিতে কি ভুলে যেত তার ঠিক নেই। আসলে অফিস থেকে ফিরে রোজ একটু ক্লাবে যায় ক্যরাম খেলতে। আজও গেছিল। তাই একটু দেরি হল।

কথা মতো রাত ন'টার ভিতরে দীপ স্টেশনে পৌঁছে গেছে, ১০.৪০ এ ট্রেন। কিন্তু জয় ছেড়ে আর কেউ এখনো পৌঁছায়নি। পুরো টিমের ভিতরে একমাত্র সে আর জয় অবিবাহিত। বাকি সুজয়, বিপিন, অনুপম, জয়ন্ত এরা সবাই বিবাহিত। বিপিনের তো একটা তিন বছরের ছেলেও আছে। ওরা সবাই বৌ বাচ্চা নিয়েই যাচ্ছে। ওদের সবার দেরি হচ্ছে দেখে দীপ বলল,

"দেখেছিস, এই জন্য বিয়ে করতে চাই না। একা থাকার কি সুখ তা মানুষ বিয়ের পর বোঝে। আর আমি আমার বিবাহিত বন্ধুদের দেখেই বুঝেছি। তাই ওই ভুল আর করছি না।"

কথা শেষ হতেই পিছনে তাকিয়ে দেখে বিপিন আসছে। দু'হাতে দু'টো বিশাল বড় বড় ব্যাগ নিয়ে ভালো করে হাঁটতে পারছে না। বৌ কাঁধে ব্যাগ আর হাতে ছেলেকে ধরে ওর পিছনে পিছনে আসছে। জয় তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ধরল ওর একটা ব্যাগ। কাছে আসতেই দীপ বলল,

"তিন দিন ঘুরতে এতো কি নিয়েছিস? আমার তো এই ছোট্ট একটা ব্যাগেই সব ধরে গেছে।"

"তুই আর আমি কি এক হলাম! তুই একা, আর আমরা তিন জন। তার উপর ছেলেটা ছোট। ওর কত কি লাগে।"

একে একে সুজয়, অনুপম আর জয়ন্ত চলে এলো। ওদেরও বড় বড় দু'টো করে ব্যাগ হয়েছে। জয় বলল,

"হ্যাঁ রে, বিপিনের না হয় ছেলের জন্য এতো গুলো ব্যাগ। তা তোদের এতো বড় ব্যাগ হল কেন?"

অনুপম হেসে বলল,

"আর বলিস না ভাই! বৌ বলে তিন দিনে ছ'টা জামা পরবে। তার পর একটা পরে স্নান করবে, একটা পরে ঘুমাবে। উফ্ বৌ থাকা যে কি ঝক্কি বুঝবি না ভাই। তোরাই ভালো আছিস।"

"আচ্ছা, নিজের বুঝি কিছু নাওনি! যত দোষ আমার! এবার যখন বেড়াতে যাব তখন তোমার কিছু নেব না। দেখবে ব্যাগ একটা কমে যাবে।"

অনুপমের বউয়ের কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

ট্রেনে উঠে গল্প করতে করতে যে যার বিছানা করছে। বৌ'রা একটা সিটে বসে গল্প করছে। বিছানা হয়ে গেলে যে যার শুয়ে পড়ল। ওদের দেখে অবাক লাগছে দীপের। বর গুলো কেমন বিছানা করে দিল, আর বৌ গুলো কি সুন্দর গিয়ে শুয়ে পড়ল। এই জন্যই বিয়ে করতে ইচ্ছা হয় না ওর। ছেলেরা বিয়ের পর কেমন গোলাম টাইপের হয়ে যায়। একবার এটা গুছায়, একবার ওটা গুছায়। ব্যাগ থেকে বৌ কে জিনিস খুঁজে দেয়। ঘুরতে গিয়ে পুরো কুলি হয়ে যায়। দেখে দেখে অসহ্য লাগে ওর।

দীপের খুব ইচ্ছা ছিল ওখানে দু'টো ঘর নেওয়ার। একটাতে ছেলেরা আর একটাতে মেয়েরা থাকবে। কিন্তু বিপিন রাজি হল না। ছেলেটা রাতে অনেক বার ওঠে। তাই বৌ একা সামলাতে পারবে না। অনুপম আর জয়ন্ত ও রাজি নয়। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে পরিবারকে আলাদা রাখার পক্ষপাতি তারা নয়। অগত্যা সে আর জয় একটা ঘর নিল, আর বাকিরা আলাদা আলাদা ঘর নিল। 

দুপুরে সমুদ্র স্নান সেরে ছেলেরা আড্ডা দিতে বসলে মেয়েরা বেড়িয়ে পড়ল কেনাকাটা করতে। এই সুযোগে দীপ বাকিদের জিজ্ঞাসা করল,

"হ্যাঁ রে, তোরা বৌ বাচ্চা নিয়ে বোর হোস না? রাত জেগে বাচ্চা সামলাস, বিছানা করিস, কুলি গিরি করিস, বিরক্ত লাগেনা তোদের?"

বিপিন হেসে বলল,

"অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর ছেলে যখন বাবা বলে গলা জড়িয়ে ধরে তখন নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ মনে হয়। বৌ সারাদিন ওই বাচ্চার সব ঝামেলা সামলায়। তার উপর সংসারের চাপ। রাতে ওকে একটু বিশ্রাম দিই। মেয়ে হলেও মানুষ তো।"

অনুপম বলল,

"সারা বছর সংসারে কুলি গিরি করছে বৌ গুলো। এক দিন বাড়ি থাকলে বুঝবি ওদের কি জ্বালা। আমার বৌ তো অফিস যায় রান্না করে, আবার ফিরেই রান্না ঘরে ঢোকে। মা বাবার কখন কি প্রয়োজন আমার থেকে ওই ভালো জানে। তাই বিছানাটা রোজ আমিই করি। এটুকু করলে নিজে শান্তি পাই। কিছু তো একটা করলাম। আসলে কি জানিস ভাই, দু'জন দু'জন কে না বুঝলে সংসার হয় না। ওরা সব ছেড়ে এসেছে আমাদের কাছে। ওদেরও তো কিছু চাহিদা, ইচ্ছা, শখ থাকে। সব পূরণ করতে না পারি যে টুকু পারি তাই শান্তি।"

"আচ্ছা অনুপম আগে তো বলতিস রোজ সন্ধ্যেবেলা ক্লাবে যাস। বিয়ের পর নিশ্চয়ই আর যাস না। গেলে বৌ রাগ করবে। তা বৌদের এই অন্যায় আবদার গুলো মানতে ভালো লাগে?"

"তোর প্রশ্নের উত্তর পরে দিচ্ছি দীপ। আগে আমার একটা কথার উত্তর দে। রোজ যদি বাড়ি ফিরে দেখিস তোর মা পাশের বাড়ির কারুর সাথে গল্প করতে গেছে, তুই ফেরার পরেও মা ফিরছেন না। রাত ১০ টায় এসে খালি খেতে দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন। কেমন লাগবে তোর? নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না। বাড়ির বৌদের তাহলে কি করে প্রতি দিন সন্ধ্যে বেলা একা থাকতে ভালো লাগবে? ওরাও তো সারাদিন পর আমাদের সাথে একটু সময় কাটাতে চায়। তবে মাঝে মাঝেই যাই ক্লাবে। তখন বৌ রাগ করে না। আসলে সবার দিকটা ভাবতে হয়।"

এই তিন দিনের ঘোরাতে অনেক কিছু শিখল দীপ। স্বামী স্ত্রী যে কোনো ভালো জিনিস কেমন ভাগ করে খায়। ভিড়ের মধ্যে কেমন সামলে রাখে একে অপরকে। একজনের মনের ইচ্ছা কি অদ্ভুত ভাবে আর একজন বুঝতে পারে। সত্যি কি অসাধারন একটা সম্পর্ক যেখানে দুঃখ, রাগ, ভালোবাসা, মান-অভিমান সব আছে শুধু সে গুলোকে দুটো মানুষ মিলে মিশে ভাগ করে নিতে জানতে হয়।

ট্রেনে কলকাতা ফেরার সময় দীপ দেখল বৌ গুলো সব কেনাকাটার লিস্ট খুলে বসেছে। বাড়ির সবার জন্য কিছু না কিছু কিনেছে। আর তাই দেখে ছেলে গুলো সমানে কৃত্রিম সুরে ঠাট্টা করে যাচ্ছে। সত্যি ওদের ভিতরের হাসি ঠাট্টা, ভালোবাসা আজ বিয়ে সম্পর্কে দীপের ধারণা বদলে দিয়েছে অনেকটা। কেমন যেন তার মনে হচ্ছে জীবনের অনেক বড় একটা অধ্যায় ওর অজানা রয়ে গেছে। ওই অজানা অধ্যায়টা জানার জন্য আজ মনটা কেমন উতলা হচ্ছে। না এবার মা বললে আর না করবে না সে। কিছু ঝক্কি পোহাতে মনে হয় ভালই লাগে।

- অতসী দাস

মিষ্টি সম্পর্ক

 গল্প : মিষ্টি সম্পর্ক

নীরা নতুন অফিসে জয়েন করতে, বস মিস্টার সেন নীরাকে নিয়ে একটা রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন, “একটা নতুন প্রোজেক্ট শুরু হচ্ছে, আপনি ওতে যোগ দিন। ওদের একজন প্রোগ্রামার লাগবে।”

রুমে ঢুকে নীরা দেখল সেখানে ছজন বসে আলোচনা করছিল। সবাইকে সম্বোধন করে মিস্টার সেন বললেন, “উনি আপনাদের প্রোজেক্টে প্রোগ্রামার হিসেবে যোগ দেবেন। ওনার নাম নীরা চ্যাটার্জি।” ওই গ্রুপে মাঝে বসা নীল রঙের জামা পরা ভদ্রলোকটাকে দেখিয়ে নীরাকে মিস্টার সেন বললেন, “উনি হচ্ছেন প্রোজেক্ট ম্যানেজার কৌশিক ব্যানার্জি, ওনার আন্ডারে আপনি কাজ করবেন।”

নীল জামা পড়া লোকটা মানে কৌশিক একটু বিস্ময়ের সাথে দাঁড়িয়ে পড়ল। অবাক চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে থাকল। মুহূর্তের মধ্যে বুঝতে পারল এই ভাবে তাকানো অশোভনীয়, তাই সাথে সাথে হ্যান্ড শেক করার জন্য হাত বাড়াল। কৌশিককে দেখেই নীরা কি রকম থতমত খেয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেতে, কিন্তু এতো ভালো চাকরি ছাড়বে কি করে? আগের চাকরিটা হারিয়ে ফেলেছে। কৌশিক একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। নিরুপায় হয়ে আমতা আমতা করে নীরাও হাত বাড়াল।

মিস্টার সেন বাকি পাঁচজনের সাথেও পরিচয় করালেন, চারজন ছেলে রিজু, মির, রাকিব আর সোহাম আর একজন মেয়ে তিস্তা। নীরা বাকিদের সাথেও হাত মেলালো। কৌশিক ওকে একটা চেয়ার দেখিয়ে বলল, “বসুন”। নীরা যন্ত্রচালিতের মত সামনের চেয়ারে বসল। কিন্তু মাথা কাজ করছে না। মিস্টার সেন বললেন, “আপনারা কাজ করুন আমি যাই।”

নীরার খুব ইচ্ছে করছিল মিস্টার সেনকে বলতে অন্য প্রোজেক্টে যোগ দিতে চায়। নতুন জায়গায় কি করে বলবে? মনে মনে ভাবল, ছাড়তে তো যেকোনো দিন পারবে। চাকরি করতে বেরোলে এতো সব ভাবলে চলবে না। সাথে কে কাজ করছে দেখলে চলবে না। নিজের কাজ করে বেরিয়ে যেতে হবে।

বাকিরা আলোচনা করে যাচ্ছে, ও শোনার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুই মাথায় নিতে পারছে না। বারে বারে চোখ ঘড়ির দিকে যাচ্ছিল, কতক্ষণে মুক্তি পাবে এখান থেকে। নীরার অস্বস্তি হচ্ছে বুঝে কৌশিক দু একবার নীরার দিকে তাকাল, কিন্তু নীরা নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছিল। বিকেল সাতটা নাগাদ কৌশিক বলল, “আজ ওঠা যাক। কাল বাকিটা ডিসকাস করে নেব। মিস চ্যাটার্জি আমি কিছু পেপার দিচ্ছি, বাড়ি গিয়ে পড়ে নেবেন। আমাদের প্রোজেক্টের সম্বন্ধে আপনার কিছুটা আইডিয়া হয়ে যাবে।”

সবাই উঠে পড়ল রুম থেকে বেরোবার জন্য। কৌশিক নীরার দিকে তাকিয়ে বলল, “এক মিনিট অপেক্ষা  করবেন আপনি। আমি কাগজগুলো আলমারি থেকে বের করে দিচ্ছি।”

নীরা ঠিক এই মুহূর্তটা এভয়েড করতে চায়ছিল। কিন্তু এখন কি করবে? মাথায় কিছু আসছে না? বাকিরা সবাই বেরিয় যাচ্ছে। সহকর্মী মহিলাটির নাম কিছুতেই মনে পড়ছে না। কোন রকম বলল, “হ্যালো ম্যাম!”

তিস্তা হ্যালো ম্যাম শুনে ঘুরে তাকাল। নীরা বলল, “আপনার সাথে একটু দরকার ছিল।”

তিস্তা একবার কৌশিকের দিকে তাকাল। কৌশিক নীরার দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করল, তারপর তিস্তাকে বলল, “আপনিও বসুন।”

কৌশিক আলমারি থেকে কিছু কাগজ বার করে দিতেই নীরা সেগুলো নিয়ে কোন রকম ব্যাগে ঢুকিয়ে তিস্তার সাথে বাইরে বেরিয়ে গেল। তিস্তার নীরার এই ব্যবহার একটু অস্বভাবিক মনে হচ্ছিল। তাছাড়া নীরার কপালে ঘাম দেখে সামথিং ইজ রং মনে হচ্ছিল। তাই নীরাকে বলল, “আপনার শরীর ঠিক আছে? এত ঠাণ্ডাতেও কি রকম ঘেমে গেছেন।”

নীরা আমতা আমতা করে বলল, “না আসলে সারাদিন খুব ধকল গেছে। দুর্গাপুর থেকে আজকেই এসেছি। কোন ভোরে উঠেছি তাই একটু ক্লান্তি লাগছে।”

তিস্তা বলল, “আপনি কোলকাতায় থাকেন না?”

নীরা, “না আমি এখানে থাকি না। আগের চাকরি খড়গপুরে ছিল। সেখানে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। গত মাসে কোম্পানিটা উঠে গেছে।”

তিস্তা, “আজ কোথায় থাকবেন?”

নীরা বলল, “আজ লাবনির কাছে একটা গেস্ট হাউস বুক করেছি। দু একদিনের মধ্যে একটা ভাড়া বাড়ি খুঁজে শিফট হয়ে যাব।”   

 নীরা তিস্তার সাথে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি করে নিল। এক সাথে অফিস থেকে বেরোতো। টিফিন এক সাথে খেতো। যেকোনো প্রকার কৌশিকের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করত। কৌশিক দু একবার চেষ্টা করেছিল নীরার সাথে একা কথা বোলার, কিন্তু যখন বুঝল নীরা ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছে সেও আর নীরার সাথে একটা দুরত্ব বোজায় রাখা শুরু করল।

নীরা তিস্তার সহযোগিতায় ওর বাড়ির কাছে সল্টলেকে একটা ভাড়ায় ফ্ল্যাট জোগাড় করে শিফট হয়ে গেল। পাশাপাশি থাকার ফলে দুজনের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। নীরা তিস্তার সাথে অফিসে আসা আর যাওয়া শুরু করল, তাতে কৌশিককে এড়িয়ে যাওয়া খুব সহজ হয়ে গিয়েছিল। 

নীরা খড়গপুর থেকে ইন্ডাকশন আর বাসনগুলো নিয়ে চলে এসেছিল। মাঝে মাঝে নিজে রান্না করতো আবার কখনও হোম ডেলিভারি থেকে আনিয়ে নিত। মাঝে মাঝে তিস্তাও নীরাকে নিজের বাড়ি ডিনারের জন্য ডেকে নিত। দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। ঠিক এমন সময় একদিন রাত একটায় নীরার ফোন বেজে উঠল। এতো রাতে কে আবার ফোন করল? ঘুমের মধ্যে ফোনটা ধরল। ওপার থেকে ভীত মায়ের আওয়াজ এল, “নীরা বাবার বুকে ব্যাথা করছে। কি করি এত রাতে?”

বাবার বুকে ব্যাথা শুনেই নীরার মাথা ঘুরতে লাগল। এত  দূর থেকে দুর্গাপুরে কি করে সাহায্য করবে? মা একা কি করবে? কার সাথে যোগাযোগ করা যাবে? ওর সব বন্ধুরা তো বাইরে থাকে। আত্মীয়রাও কেউ দুর্গাপুরে থাকে না। তিস্তাকে ফোন করে কোন লাভ নেই। নিরুপায় হয়ে কৌশিককে ফোন করল। কৌশিক এতো রাতে নীরার ফোন দেখে একটু চমকে গেল। ফোন ধরে জিজ্ঞেস করল, “কি হল? এতো রাতে ফোন করলে?”

নীরা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “মা একটু আগে ফোন করেছিল, বাবার নাকি বুকে ব্যাথা উঠেছে। মা একা আছে বাড়িতে। কি করব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।”

কৌশিক একটু ভেবে বলল, “দেখি কি করতে পারি।”

কৌশিক ফোন রেখে দিল। কিন্তু নীরার অস্বস্তি বেড়েই চলল। কি করবে বুঝতে পারছে না। ইচ্ছে করছিল ছুটে বাবা মায়ের কাছে চলে যায়। কিন্তু এতো রাতে সেটা কি করে সম্ভব?

দশ মিনিটের মধ্যে কৌশিক আবার ফোন করে বলল, “মাকে বলো একটু টাকা নিয়ে তৈরি হয়ে থাকতে। পনেরো মিনিটের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স চলে আসবে। নার্সিং হোমের সাথেও যোগাযোগ করেছি। নার্সিংহোমের টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। সেটা আমি পাঠিয়ে দেব। তুমি তৈরি হয়ে থাকো দুর্গাপুর যাওয়ার জন্য, আমি আধ ঘণ্টার মধ্যে আসছি।”

নীরা মাকে ফোন করে জানিয়ে দিল খবরটা। এত সহজে সমস্যার সমাধান হবে ভাবতেও পারেনি। আশায় করেনি বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছেও এতো তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যাবে। ভেবেছিল সকালের আগে বাড়ির জন্য বেরোতে পারবে না। তাড়াতাড়ি আলমারির সামনে পড়া কিছু জামা কাপড় ব্যাগে ভরে নিল। সামনে হ্যাঙ্গারে টাঙ্গানো জিন্স আর টি শার্ট পরে নিজেও তৈরি হয়ে গেল। 

মায়ের কাছে থেকে খবর পেল বাবাকে আই সি ইউতে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তাররা দেখছে। মায়ের কথা শুনে নীরা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করল। আধ ঘণ্টার মধ্যে কৌশিক গাড়ি নিয়ে চলে এল। নীরা বেরিয়ে পড়ল কৌশিকের সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়ি ছুটে চলল দুর্গাপুরের দিকে। বড় রাস্তা ছোটো রাস্তা, হাইওয়ে ধরে ছুটছে গাড়ি। নীরার মনটাও ছুটছে নিজের অতীত জীবনের অলিগলি দিয়ে।

নীরা আর কৌশিক দুজনে দুর্গাপুরের এন আই টি থেকে সি এস সি নিয়ে বিটেক পাস করেছিল। তারা ব্যাচমেট ছিল। নীরা নবীনবরনের দিন কৌশিকের আবৃতি শুনে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। কৌশিকেরও নীরাকে বেশ ভালো লেগেছিল। দিনে দিনে ওদের বন্ধুত্ব প্রগাড় হয়ে ভালোবাসায় পরিণত হয়ে গেল।

নীরা দুর্গাপুরের মেয়ে ছিল তাই বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করত। কৌশিক ধানবাদের ছেলে ছিল তাই হোস্টেলে থাকত। প্রায় দিন নীরা কৌশিককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মায়ের হাতের রান্না খাওয়াত। কৌশিকেরও নীরার মায়ের হাতের রান্না খুব পছন্দ ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চারটে বছর ওরা চুটিয়ে প্রেম করেছিল। ক্লাস শেষ হতে দুজনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে বসে গল্প করত। দুজন পড়াও এক সাথে তৈরি করে নিত। প্রতি রবিবার এক সাথে সিনেমা দেখতে যেত। কলেজে ওদের জুটির নাম রোমিও আর জুলিয়েট পড়ে গিয়েছিল। 

 বিটেক পাস করে দুজনই একই কোম্পানিতে চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল। ওদের বাড়ি থেকে এই সম্পর্কে কারও আপত্তি ছিল না। দুজন কোলকাতা শহরে আলাদা আলাদা থাকছিল। বিয়ে যখন ওরা একে অপরকেই করবে তো অপেক্ষা করার কোন মানে হয় না, তাই দুই বাড়ির লোক মিলে ওদের চার হাত এক করে দিল। হানিমুনে সিঙ্গাপুর ঘুরতে গেল। বিয়ের প্রথম ক মাস বেশ আনন্দেই কাটল। কিন্তু বিয়ের যত দিন গড়াচ্ছে, একের পর এক সমস্যা আসতে লাগল। দুজনের অফিস টাইমের কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না, কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। বাড়ির কাজ নিয়ে সমস্যা হতে লাগল। দুজনই নিজের মা বাবার এক মাত্র সন্তান, খুব আদরে বড় হয়েছিল। বাড়ির কোন কাজ শেখেনি। বাড়িতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে কৌশিক আশা করে নীরা রান্না করবে, কিন্তু নীরা ভাবে সেও তো একই রকম পরিশ্রম করে এসেছে, সেই বা রান্না করবে কেন? ঘর মুছবে কেন? বাসন মাজবে কেন? 

বাড়িতে আত্মীয় এলে কৌশিক আশা করে ওদের দেখাশোনা করার জন্য নীরা ছুটি নিয়ে বাড়ি থাকবে। কিন্তু নীরা ভাবে সেই কেন ছুটি নেবে? পালা করে কৌশিকও নিক। বাড়ির কাজের চাপে ওদের সম্পর্ক নষ্ট হতে লাগল। একে অপরের সাথে ঠিক ভাবে কথাও বলত না। অফিসেও একে অপরকে অপমান করার সুযোগ ছাড়ত না। শেষে দুজনেই ডিভোর্স নিয়ে নিয়েছিল। নীরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে খড়গপুরে একটা চাকরি ধরল। তারপর দীর্ঘ দশ বছর আর যোগাযোগ ছিল না। দুজন নিজের চাকরি আর উন্নতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। 

গাড়িতে বসে নীরা মাঝে মাঝে কৌশিকের দিকে ঘুরে তাকাছিল। তার খুব খারাপ লাগছিল কৌশিককে এই ভাবে মাঝ রাতে কষ্ট দিতে। কৌশিক এক মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল। নীরা বাড়িতে ফোন করলে বা বাড়ি থেকে ফোন এলে শুধু কৌশিক খবর জানার জন্য নীরার দিকে ফিরে তাকাছিল। নীরা খবরটা জানিয়ে দেওয়ার পর আবার কৌশিক এক মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। এতো লম্বা সফরে খুব প্রয়োজন ছাড়া একটাও কথা কৌশিক নীরাকে জিজ্ঞেস করেনি।

রাস্তা ফাঁকা ছিল, তাই ওরা সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্য দুর্গাপুরে নার্সিংহোমে ঢুকে গেল। মা নীরাকে দেখতে পেয়ে পায়ের তলায় জোর খুঁজে পেল। এতক্ষণ দিশাহারা হয়ে বসেছিল। ছুটে এসে নীরাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। নীরাও মাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলল। নীরার মা কৌশিককে দেখে বেশ খুশি হল। কৌশিক নীরার মায়ের পা ছুয়ে প্রণাম করল। নীরার মা কৌশিকের চিবুক ছুঁয়ে চুমু খেল আর আশীর্বাদ করল, “জীবনে অনেক উন্নতি কর বাবা!”

  নীরার মা চিরকাল কৌশিককে খুব ভালোবাসে। তার মতে নীরা আর কৌশিকের ডিভোর্সের কারণ নীরাই। নীরার মায়ের ভাবনা বৌয়ের চোখে বরের মান সম্মান বারে যদি বর ভালো চাকরি করে আর  বরের চোখে ভালো বৌ সেই যে ভালো রান্না করতে পারে, ঘর ভালভাবে গুছিয়ে রাখতে পারে, সুন্দর ভাবে বাচ্চা মানুষ করতে পারে আর বাড়ির সবার যত্ন নিতে পারে। সেই দিক থেকে কৌশিক ভালো বর, যেহেতু খুব ভালো চাকরি করে, কিন্তু তার মেয়ে বৌ হিসেবে দক্ষ নয়। রান্না খুব ভালো জানে না। ঘর গোছানোতেও খুব একটা উৎসাহ নেই। নিজের যত্নই ঠিক নিতে পারে না। বাচ্চা তো নিতেই চায় না। তাই কৌশিকের পক্ষে এই ধরণের মেয়ের সাথে মানিয়ে না নিতে পারা খুব স্বাভাবিক।

নীরার বাবার শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল হতে কৌশিক ফিরে গেল কোলকাতায়। নীরাকে বলে গেল, এখুনি কাজে যোগ দেওয়ার দরকার নেই, সে সামলে নেবে। বাবা আর একটু সুস্থ হলে এখান থেকেই কাজে জয়েন করে। পুরোপুরি ঠিক হলে নীরা কোলকাতায় ফিরে যায়, তার আগে নয়।

নীরা বুঝতে পারছিল না কৌশিকের কাছে কি ভাবে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। কৌশিক ফিরে যাওয়ার সময় নীরা কৌশিকের হাত ধরে বলল, “তুমি না থাকলে কি হত আমি ভাবতেও পারছি না। আমি সার জীবন তোমার কাছে ঋণী হয়ে রইলাম।”

কৌশিক হাল্কা করে নীরার কাঁধে হাত রেখে বলল, “ইটস ওকে। আমি এমন কিছু করিনি। বাবা মায়ের খেয়াল করো।”

বাবা পুরো সুস্থ হয়ে যেত নীরা কোলকাতায় ফিরে গেল। কিন্তু এখন আর নীরা কৌশিককে এড়িয়ে চলে না। ওদের মধ্যে একটা সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠল। অফিসের কাজ একে অপরের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করে। কিন্তু কেউ কারও প্রতি বিশেষ আকর্ষণ দেখাত না। ওদের প্রোজেক্টের কাজ বেশ ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল। এক দিন তিস্তা নীরাকে বলেই ফেলল, “কদিন আগে অব্দি দেখতাম তুই কৌশিকদার থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করতিস। এমন কি হল যে এখন বেশ সুন্দর ভাবে গল্প করিস কৌশিকদার সাথে। কৌশিকদাকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি, কারও প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখিনি। কিন্তু আজকাল দেখি তোকে একটু অন্য চোখে দেখে।” 

নীরা একটা মিষ্টি হাসি হেসে বলল, “না রে, আগে ভয় পেতাম, এখন আর ভয় পাই না।” ইচ্ছে করে সত্য কথা গোপন করে গেল নীরা। নিজের অতীত ঘাঁটতে চায়নি সে।

আরও কয়েক মাস যেতে একদিন কৌশিক অফিস এলো না। নীরা চিন্তায় পড়ে গেল। ও তো সহজে কামাই করে না। এক সহকর্মী জিজ্ঞেস করতে বুঝল কৌশিকের জ্বর হয়েছে। বাথরুমে গিয়ে কৌশিককে ফোন করল। কৌশিক মুখে বলল ভালো আছে, কিন্তু গলার আওয়াজে নীরা বুঝতে পারল কৌশিক খুব একটা ভালো নেই। অফিস শেষ হতেই সোজা কৌশিকের ফ্ল্যাটে চলে গেল। দু বছর এই ফ্ল্যাতেই ছিল তাই বিল্ডিং চিনতে অসুবিধে হয়নি। দশ বছর পরেও পানগুমটি, রঙ্গন গাছ সব ওই রকমই আছে। অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ান সেই রবিদাই আছে। ওকে চিনতেও পারল। এতো দিন পরে দেখছে বলে একটু চমকে গেল। একটু হেসে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন বৌদি?”

বৌদি শুনে নীরার একটু অস্বস্তি হল। সেই সম্পর্ক অনেক আগে চুকে গেছে। তবুও কিছু বলেনি সেই ব্যাপারে। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে নীরা দারোয়ানকে বলল, “ভালো, আপনি ভালো আছেন তো?”

দারোয়ান ওর সাথে লিফটের দিকে এগোতে এগোতে বলল, “ভালো আছি।” লিফটের কাছে এসে নীরাকে লিফটের দরজা খুলে দিল। নীরা উঠে লিফটের দরজা বন্ধ করে দিল আর চার টিপল। লিফট পাঁচতালায় এসে থামল। লিফট থেকে বেরিয়ে একটু বাঁ দিকে হাঁটতেই কৌশিকের ফ্ল্যাট। দরজার গায়ে নেম প্লেটে এখনও লেখা আছে কৌশিক ব্যানার্জি আর নীরা ব্যানার্জি। কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকল নেম প্লেটের দিকে তারপর আস্তে করে হাত বাড়াল কলিংবেলের দিকে। কলিংবেল বাজার প্রায় দু মিনিট পর দরজা খুলল। সামনে নীরাকে দেখে কৌশিক চমকে গেল। বলল, “তুমি!”

নীরা বলল, “তোমার শরীর খারাপ শুনে এলাম। এখন কেমন আছো?”

কৌশিক নিজের কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল, “একটু গরম আছে মনে হয়। টেম্পারেচার দেখিনি।”

নীরা আসার সময় প্যারাসিটামল আর থার্মোমিটার কিনেই এনেছিল। ব্যাগ থেকে থার্মোমিটার বার করে কৌশিকের টেম্পারেচার চেক করল, এক শো দুই জ্বর। নীরা কৌশিককে জিজ্ঞেস করল, “কিছু খেয়েছো?”

কৌশিক বলল, “কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না, তাই খাইনি।”

নীরা রান্না ঘরে গিয়ে দেখল কিছু খাবার জিনিস আছে কি না। শুধু বিস্কুট চোখে পড়ল। ফ্রিজেও কিছু পেল না। র চা আর কয়েকটা বিস্কুট নিয়ে এসে বলল, “এইগুলো খেয়ে নাও, তারপর জ্বরের ওষুধ দেব।”

কৌশিক বলল, “ইচ্ছে করছে না খেতে।”

নীরা একটা ধমক দিল, “চুপচাপ খেয়ে নাও।” ধমক দিয়েই নীরা লজ্জায় পড়ে গেল। এখন কৌশিকের উপরে তার সেই জোর থাকার কথা নয়। কৌশিক নীরার দিকে চেয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল। দেখতে পেল দশ বছরের আগের নীরাকে। কৌশিক ভালো ছেলের মত চুপচাপ চা বিস্কুট খেয়ে নিল। নীরা একটু পরে ওষুধ আর জল কৌশিকের দিকে এগিয়ে দিল। সেটাও সে চুপচাপ খেয়ে নিল।

কৌশিকের ডেঙ্গু ধরা পড়ল। কৌশিক নিজেকে পুরোপুরি নীরার হাতে ছেড়ে দিল। নীরা নিজের বাড়ি গিয়ে নিজের কিছু জামা কাপড় আর কিছু প্রয়োজনের জিনিস নিয়ে চলে এল। নীরা রাতদিন জেগে কৌশিকের সেবা করে গেল। কৌশিকের গা স্পঞ্জ করাতে গিয়ে নীরা দশ বারো বছর আগেকার মধুর স্মৃতিতে হারিয়ে যেত আর নিজের অজান্তেই কৌশিককে জড়িয়ে ধরত। সাথে সাথে নিজের ভুল বুঝতে পারত আর ছেড়ে দিত। কৌশিক প্রথম কয়েকবার চমকে গিয়েছিল। নীরা জড়িয়ে ধরলে ওরও খুব ভালো লাগত, তাই তারপর থেকে নীরা ওকে জড়িয়ে ধরলে সেও নীরাকে জড়িয়ে ধরত। কৌশিক সুস্থ হতে লাগল আর সাথে সাথে ওদের সম্পর্কের গভীরতাও বাড়তে লাগল। জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো ওরা আবার খুঁজে পেতে লাগল। বিয়ের প্রথম দিকে যেমন তারা একে অপরকে সম্পূর্ণ রুপে পেত, ঠিক সেই মুহূর্ত আবার ওদের জীবনে ফিরে এল। 

 জ্বর একটু কমতে শুরু করতে নীরা কৌশিকের বাড়ি থেকে ওয়ার্ক ফ্রাম হোম শুরু করল, যেহেতু প্রোজেক্ট ম্যানেজার কৌশিক ছিল তাই অনুমতি পেতে অসুবিধে হয়নি। কৌশিক আরও একটু সুস্থ হতে নীরা কৌশিকের বাড়ি থেকেই অফিস যেতে শুরু করল আর কৌশিক বাড়ি থেকে ওয়ার্ক ফ্রাম হোম করতে লাগল। নীরা বাড়ি ফিরে এসে দেখতো কৌশিক ঘরটা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখেছে। রান্নাও করে রেখেছে। ওর রান্না খেয়ে নীরা অবাক হয়ে একদিন বলল, “খুব ভালো রান্না করছো! কোথায় থেকে শিখলে?”

কৌশিক হাসতে হাসতে বলল, “সময় অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।” 

 কৌশিক পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেল। পরেরদিন থেকে কৌশিক অফিস যাবে মনস্থির করল। নীরা নিজের ব্যাগ গোছাতে শুরু করল। ওকে ব্যাগ গোছাচ্ছে দেখে কৌশিক নীরাকে পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, “ব্যাগ গোছাচ্ছ কেন?”

নীরা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, “তুমি পুরো সুস্থ হয়ে গেছো, তাই এবার আমার ফিরে যাওয়ার পালা।”

কৌশিক, “কি দরকার ভাড়া বাড়িতে পড়ে থাকার। চলো আবার থেকে নতুন ভাবে জীবন শুরু করি।”

নীরা কৌশিকের দিকে ঘুরল। দু হাত দিয়ে কৌশিকের গলা জড়িয়ে কৌশিকের চোখের দিকে তাকাল। কৌশিকের চোখের মধ্যে বিয়ের আগের ভালোবাসা আবার খুঁজে পেল। বলল, “তোমার এই ভালোবাসা আমি হারাতে চাই না। এক সাথে বেশিদিন থাকলে আমরা খুব হিসেবি হয়ে উঠি। কি দিলামের থেকে আমাদের কাছে কি পেলাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের এই মিষ্টি সম্পর্ক বোজায় রাখতে একটু দূরেই থাকি। সুখে দুঃখে ঠিক এই ভাবেই একে অপরের পাশে থাকব।” 

কৌশিক কোন কথা বলতে পারছিল না। তারও নীরাকে ছাড়তে খুব কষ্ট হচ্ছিল। চোখ ছলছলে হয়ে এল। কিন্তু নীরার কথা যে কটু সত্য সেটা অস্বীকার করতেও পারছিল না। নীরা কৌশিকের ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলল, “চলি”। আস্তে করে নিজেকে কৌশিকের বাহুবন্ধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগোল। জানে আর এক মুহূর্ত থাকলে দুর্বল হয়ে পড়বে।       

 সুনন্দী কামাথ

(সমাপ্ত)

কতোটা ভালোবাসো

কতোটা ভালোবাসো


 দীপান্বিতা-- কতোটা ভালোবাসো বলো দেখি!

তন্ময়-- তোমাকে ভালোবাসার দুঃসাহস আমার নেই। তবে তুমি চাইলে, কোনো এক শীতের রাতে হাতে হাত রেখে হলুদ আলোর ছাওয়ায় অনেকটা পথ হেঁটে যেতে পারি।

দীপান্বিতা-- আর কী পারো?

তন্ময়-- বসন্তের বিকেলে সবুজ পাতার অলংকার গড়ে দিতে পারি। শাড়ির আঁচলটা কাঁধ থেকে নামলে, ঠিক করে দিতে পারি।

দীপান্বিতা-- আর?

তন্ময়-- মাঝরাতে ঘুম ভেঙে বাইরের বারান্দায় তুমি এসে দাঁড়ালে, তোমার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পাড়ি।

দীপান্বিতা-- কিন্তু, মাঝরাতে ঘুম ভাঙবে কেন? 

তন্ময়-- সবটা কী আর মানুষের নিজের হাতে থাকে গো দীপা! সবার কাছে নিজেকে আড়াল করতে গিয়ে, শেষ অবধি নিজেকেই নিজের কাছে আড়াল করে ফেলে। তখন তো নিজের শরীরটা অবধি নিজের কথায় চলে না।

দীপান্বিতা-- সে নাহয় তুমি ই ঘুম পাড়িয়ে দিলে।

তন্ময়-- সে পারি। তবে অভিমানে জেগে থাকা জরুরি। ঘুমিয়ে পড়লে ওরা লুকিয়ে পড়ে। পরে সময় মতো রাগ হয়ে বেরিয়ে আসে। আমার উপর রাগ করতে দেবো না তোমায়।

দীপান্বিতা-- কিন্তু এইটুকু তে জীবন চলে না, তা কি বোঝো? বাস্তব না চিনলে ভালোবাসা চলে শুনি। কিন্তু সংসার করা তো সহজ নয়।

তন্ময়-- তবে, আজ থেকে ভালোবাসার দ্বায়িত্ব আমি নিলেম। সংসার এর দ্বায়িত্ব তুমি ই নাও। তারপর সময় করে আমাকেও বাস্তব টুকু চিনিয়ে দিও না হয়।

অতিরিক্ত বাস্তব সচেতন দীপান্বিতার চোখেও নদীর টান আসে। বালির কোনে কোনে জল চিকচিক করে হলুদ আলোয়। তন্ময় ওর চোখ মুছিয়ে দেয়। বাস্তবের শক্ত মেয়েটা ভেজা গলায় বলে, " বাস্তব শিখে কাজ নেই। তুমি শুধু আমার বাস্তব হয়েই থেকো।"

দীপান্বিতা কে কাছে টেনে নিলে তন্ময়। হাতে হাত রাখলে শুনি সাহস বাড়ে। হলুদ আলোয় তন্ময়ের চোখে সাহস ভিড় করে আসে। দীপান্বিতা আজকে একটু ভীতু হয়েই ওর হাত শক্ত করে ধরে থাকে। আবেগ থাকলে কিছু কিছু সময় ভীতু হতেও ভালো লাগে। সাহসী হয়ে সবসময় আবেগ গুলোকে দূরে না রাখলেই হলো। ওরাই যে ভালো থাকতে, ভালো রাখতে শেখায়।।

- অনিবেন্দ্র রায়চৌধুরী

মাতৃ দিবস - একটা অসাধারন গল্প

স্বার্থ লুকিয়ে থাকে সকল সম্পর্কের মধ্যে মাতৃ দিবস

-হ্যাঁ রে, দিনে কত টাকা দেয় তোর মালিক? 
- পাঁচশো টাকা মা।
- এ-ত। তা ক'টা সিঙাড়া গড়িস?
- হাজার দুয়েক। জানো মা, আমি না আজকাল টিভির দিকে তাকিয়েও সিঙাড়া গড়তে পারি।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ গো মা। এই দু' বছরে অভ্যেস হয়ে গেছে।

তেরো বছরের কানুর এ এক বড় গর্ব। মায়ের কোলের কাছে ঘেঁষে স্বপ্ন দেখে, অভাবী সংসারের হাত থেকে সে বাঁচাবে তার মাকে। বড় করবে ভাইদের। নিজের একটা সিঙাড়ার দোকান হবে....

-তা বাড়িতে যখন এসেছিস ভাইবোনদের জন্য একদিন বানা না। দেখি আমার বড় ছেলের হাতের সিঙাড়া কেমন? তোর বাবাও খুব খুশি হবেন।
আনন্দে চকচক করে কানুর চোখ। বাবা খুশি হবে? বেশ কালই হবে। খুব ভাল করে বানাব মা।
কানুর বাবা চোখে বিশেষ দ্যাখেন না। কারখানার আগুন ছিটকে চোখে লেগে সেই যে দু বছর আগে শয্যা নিয়েছেন, আজও সেভাবেই পড়ে। একটা চোখ যাওয়ার পর থেকে মনটাও খান খান হয়ে গেছে। সেই বাবা...
-মা, ময়দা-টয়দা আমিই কিনে আনব। তুমি শুধু আলু-টালুগুলো কেটে দিও।
-ঠিক আছে।
-মা, একটু নারকোল কোরা দেব? বেশ লাগবে খেতে।
-না। না। নারকোলের অনেক দাম। দরকার নেই।
সিঙাড়া, তার আনুষঙ্গিক...দোকানের গল্প, মালিকের গল্প... মায়ের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কানু। মায়ের কাপড়ে একটা অদ্ভুত গন্ধ। অনেকবার ভেবেছে মার একটা না-কাচা কাপড় সে নিয়ে যাবে দোকানে।

বড়বাজার অঞ্চলের দোকানঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে এমন অভ্যেস হয়ে গেছে, ভোর চারটেতে ঘুম ভেঙে যাবেই যাবে। কী আশ্চর্য সেই চারটেতেই উঠে পড়ে কানু! কী করবে। সবাই ঘুমোচ্ছে। পা টিপে টিপে বেরোয়। উঠোনে এসে আকাশের দিকে তাকায়। মেঘলা। বৃষ্টি হবে বোধহয়। 
নাহ্। উনুনটা ধরিয়ে রাখি। মা খুব খুশি হবে। কয়লা-কাঠ জড়ো করে উনুন ধরায় কানু। আস্তে আস্তে উনুনে আঁচ ওঠে। কানু তাতে ভাতের জল চাপায় হাঁড়িতে। ইস্ টাকা জমিয়ে যদি মাকে একটা গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
-তুই ওখানে কী করছিস কানু? ও মা! উনুন ধরিয়ে ফেললি? সোনা ছেলে রে আমার! 
তার পর চেঁচিয়ে অন্য ভাইদের উদ্দেশে বলে, হ্যাঁ রে তোরা দেখে যা ছেলে আমার কেমন উনুন ধরিয়ে দিয়েছে। তোমরা তো হাত পা নেড়েও বসো না।
মায়ের চেঁচামেচিতে জেগে উঠোনে চলে আসে বাকি চার ভাই। তার পর এত সামান্য ব্যাপার দেখে ওরা আবার ঘুমোতে চলে যায়।
-মা, বলো না কী সাহায্য করব তোমাকে?
- দু বালতি জল এনে দিবি সোনা?
এক ছুটে দুটো বালতি হাতে বেরিয়ে পড়ে কানু।
লাফাতে লাফাতে তেরো বছরের আনন্দে উচ্ছ্বল ছেলেটা জল আনতে যায়। ভাবে পুজোয় যখন আসবে তখন একটা চাকাওয়ালা ড্রাম বানিয়ে নিয়ে আসবে মালিককে বলে। মালিকরা দোকানে ওই ভাবেই জল আনায়। আর পুজোর ছুটিতে তিন দিন নয়, এ বার দশ দিন থাকবে মার কাছে। ভাইদের সঙ্গে খেলবে। কিন্তু পুজোয় কাজ করলে তো ডবল টাকা দেয়। দৃর। দরকার নেই। পুজোর সময় মা-কে ছাড়া ও থাকতে পারবে না।

ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরে কানু। দু' হাতে দু বালতি জল।
-আয় আয় কানু। নে, আলু আমি কেটে রেখেছি। তুই ময়দাটা নিয়ে আয়।
বালতি রেখে আবার ময়দা আনতে ছোটে কানু। কী আনন্দ! আজ সবাইকে প্রাণ ভরে খাওয়াবে সে।
বাড়ি ফিরে বড় গামলায় ময়দা মাখতে বসে। একে একে ভাইরা এসে কানুর এই কাজ দেখে যায়। 
-তোমাদের দ্বারা কিস্যু হবে না। যাও পড়তে বসো। দ্যাখো যদি পাস করতে পারো। অন্য ভাইদের মুখ ঝামটা দেয় মা। 
কানু মনে মনে এত খুশি হয়! মা তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। তার সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি 'আপন' হয়। তার ওপরেই সবচেয়ে ভরসা। চোখে জল আসে কানুর। এ বার মাত্র দুদিন ছুটি নিয়ে এসেছে। পুজোয় দশ দিন নেবেই সে।
-হ্যাঁ রে বেলা যে বয়ে যায়। তোদের হল?
-এই আর একটু বাবা। তাড়াতাড়ি করে বাকিগুলোও গড়ে নেয় সে। তার পর উনুনে কড়াই বসায়। তেল ঢালে। 
-মা। এ বার তুমি এ গুলো ভেজে দাও। আমি ভাজতে পারি না। জানো ভাজতে পারলে আরও আট আনা করে বেশি পেতাম। কিন্তু মালিক আমাকে ভাজতে দেয় না। বলে ছোট ছেলে হাত পুড়ে যাবে।
-দূর। কেন পারবি না। আমার কোলে বোস, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।
-না মা, আমার ভয় করে। থাক।
-দূর পাগল। ভয় কী রে। আয় না। আমি শেখাচ্ছি।
প্রায় জোর করেই শিখিয়ে দেয় গরম তেলে কী করে ছাড়বে। ছেঁকে তুলবে। "আট আনা ছাড়বি কেন!"
মা কানুর গলা জড়িয়ে বলে এই ছেলেটাই আমাকে ভালবাসে। কানু মায়ের বুকে মুখ গুঁজে জড়িয়ে ধরে। 
-মা এ বার পুজোয় তোমার কাছে দশ দিন এসে থাকব জানো। আবেশে বুজে আসে কানুর চোখ। 
-সে কী রে, তুই যে বললি পুজোর সময় ডবল মাইনে?
-মা।
-বোকা ছেলে। কেউ এ সুযোগ হারায়। তুই দশমীর দিন আয়।
-ও দিন তো মায়ের ভাসান।
-তাতে কী।
-মা।
-সোনা। তুই তো ভাইদের মতো অবুঝ নয়। তোর ওপরেই তো জোর করতে পারি বল। পুজোয় আসিস না বাবা। ওই টাকাটায় ভাইদের পরীক্ষার ফিজ জমা করতে হবে।
এতক্ষণে মায়ের বুকের মধ্যে থেকে মাথা তোলে কানু। যার ভাল নাম কর্ণ। এ যুগের কর্ণও বলা যায়। 
তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আবেশ।
-বোকা ছেলে। কাঁদছিস কেন। দশমীর দিন আসবি। খুব গল্প করব দুজনে।
-তাই হবে মা। ভাইদের সঙ্গে আমার কোনও দিনই আর খেলা হবে না।
চোখের জল মুছে মা-ও দ্রুত বাড়ির ভিতরে চলে যায়। দূরের ঘর থেকে ভেসে আসে খরখরে এক স্বর। 
-কী রে কর্ণ, ও কানু তোদের হল? আমার তো খিদেতে পেট জ্বলে যাচ্ছে।

 -Somdutta Chakraborty

বিসর্জন

বিসর্জন - Bengali Story - Bangla Golpo

Bosorjon

জলের ধারে বসে থাকতে থাকতে বিজয়ার অনেককালের কথা মনে পড়ছে আজ। 
কোথাকার এই নদী,কোথাকার এই জল আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে!তার জীবনও তাই!
"দোল দোল দুলুনি" ছড়ার বয়সে সে সিঁথি রাঙা করে এ বাড়িতে এসেছিল। পাঁচ বছরের মেয়ে বিয়ের কী বোঝে? 
তবে সাজতে ভারী ভালো বাসত বিজয়া। 
ওইটুকু বয়সেই নাকে নথ পড়তো টেনে, কানে ঝোলা দুল, শ্বশুরবাড়ির মেয়ে-ঝিরা তো কচি মেয়ের সাজের বহর দেখে হেসে খুন হত। 
তার কিশোর বর একবার নথ ধরে নাড়া দিয়েছিল বলে বিজয়া সাত সাতটে দিন মান করেছিল। 
শেষে একজোড়া পায়ের মল গড়িয়ে দিয়ে তার মান ভাঙানো গেল।

বর বলতে কতটুকু মনে পড়ে বিজয়ার? 
সেই এক কিশোর ছেলে, এই এত্তো বড়ো বাড়িতে সেই ছিল তার খেলার সাথী। 
অথচ খেলা কত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল তাদের। 
বিয়ের একবছর পর বিজয়ার স্বামী কিশোর ব্রজমোহন জমিদারির কাজে গিয়েছিল বায়রের গ্রামে। 
নদী পেরোনোর সময় নৌকাডুবিতে মারা যায় সে। 
ছয় বছরের বয়সে বৈধব্য এসে গ্রাস করল বিজয়ার সমস্ত সজ্জা,সুখ আনন্দের সামগ্রী। সেও প্রায় বারো তেরো বছর আগের কথা।

এতদিনে গায়ের চামড়ার সাথে এক হয়ে গেছে সাদা থানখানি। 
তবুও দুর্দান্ত অষ্টাদশী যৌবন শরীরের সমস্ত বেড়া ভেঙে বেড়িয়ে আসতে চাইছে যেন। 
বিজয়ার গায়ের রঙ শ্যামলা, বৈধব্যের কৃচ্ছসাধনে কিঞ্চিৎ কৃশ। 
বড়ো বাড়ির বিধবা বিজয়ার দিন কাটে গোয়াল ঘর পরিষ্কারে, ঠাকুরঘরের জোগাড়ে। 
যৌবনের দরজায় দাঁড়িয়ে একটা ফুল ক্রমশ যেন শুকিয়ে উঠছে। 
কেউ খোঁজ রাখছে না সে ফুলের, কেউ বলছে না একবারও -'জল খাবে ফুল, জল?'

এবছর শ্রাবনে বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে হয়েছে। 
নতুন বউ কিশোরী, কিন্তু সুন্দরী। 
অল্পদিনেই সে স্বামী ও নতুন সংসারের মনের মধ্যিখানে জায়গা করে নিয়েছে। আশ্বিনের মাঝামাঝি দুর্গাপুজো। 
উৎসবের আনন্দে বড়োবাড়ি আত্মহারা হয়ে উঠেছে। 
বাড়ির বউরা গা ভরা গয়না পরে ঠাকুর দালানে বসে আলতা পায়ে দিচ্ছে, সে দৃশ্য এ বাড়িতে চেনা। 
অথচ বিজয়ার ভারী অসহ্য লাগছে এবার। 
এতোবছর বৈধব্য নিয়ে এ বাড়ির পুজো দেখছে। 
কিন্তু এবছর নতুন বউ আসায় সব যেন কেমন ওলটপালট হয়ে গেছে। নতুন বউ স্বভাবতই সৌন্দর্যে অহংকারী, তার ওপরে স্বামী সোহাগিনী। সে আসা অবধি বিজয়াকে হীন চোখেই দেখেছে। 
যদিও এবাড়িতে কেই বা তাকে হীন চোখে দেখে না।তবু এ দৃষ্টি যেন বড়ো আঘাতের। 
কোথায় গিয়ে যেন বিজয়াকে মনে করিয়ে দিচ্ছে- "তুই বড়ো অভাগী।তোর স্বামী নেই,সুখ নেই, সোহাগ নেই। 
অথচ ওই পুচকে ছোট বউ কেমন স্বামীর বুকে রাঙাকনে হয়ে তোর সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। 
ধিক তোর আঠেরো বছরের যৌবন, ধিক তোর কৃচ্ছ্রসাধন বেঁচে থাকায়।"

বিজয়ার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে তীব্র আত্মধিক্কার - "ধিক তোর আঠেরো বছরের যৌবন, ধিক তোর কৃচ্ছ্রসাধন বেঁচে থাকায়।"

দশমীর সকালে বাড়ির মেয়ে বউরা ঠাকুরদালানে উঠে মাকে বরণ করল। 
উৎসবের শেষলগ্নে সিঁদুরখেলায় মেতে উঠল সারা বাড়ি। 
বিজয়া ঠাকুরদালানে যায়নি, শুভকাজে বিধবাদের থাকতে নেই,তায় আবার সিঁদুরখেলা। 
দুয়েকবার দালানের ওপর থেকে দেখেছিল রাঙা হয়ে যাওয়া সারা বাড়ি,সিঁদুররাঙা বউদের রাঙা মুখগুলো।

বিজয়া তখন গোয়ালের দিকে। সে দিকটা তখন নিরিবিলি, কেউ নেই। হঠাৎ বিজয়ার মনে হল গোয়ালঘরের পেছনে কারা যেন এসেছে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে দেখল সেখানে নতুন বউ, সাথ তার স্বামী বাড়ির ছোটছেলে। 
বিজয়া একবার ভাবল চলে যাবে, অথচ পা যেন সেখানেই গাছের মতো শিকড় এঁটে বসল। 
ছোটছেলে নতুন বউয়ের সিঁথিতে একমুঠো সিঁদুর মাখিয়ে দিল। নতুন বউয়ের তখন লজ্জাবনত মুখ। 
আড়ালে বিজয়ার সর্বাঙ্গ তখন কোন এক অদ্ভুত আগুনে ক্রমশ পুড়ে যেতে লাগল। 
যে সুধাস্বাদ কোনদিন পায়নি সে, সেই সুধার ভাণ্ড চোখের সামনে নির্লজ্জ নগ্নতায় এসে দাঁড়াল হঠাৎ।দুটো মানুষ ধীরে ধীরে নিবিড় হল নিরিবিলি কোণায়, তারা জানে না তৃতীয় ব্যক্তি ক্ষুধার্ত চোখ দিয়ে গ্রহণ করছে সে দৃশ্য।

বিজয়া আর পারল না। তার মনের গভীর থেকে সেই পুরাতন ধিক্কার ধ্বনি ঘুরপাক খেয়ে উঠতে লাগল -"ধিক তোর আঠেরো বছরের যৌবন, ধিক তোর কৃচ্ছ্রসাধন বেঁচে থাকায়।"

বিজয়া এখন দাঁড়িয়ে আছে জলের সামনে। 
শরতের ভরা নদী পূর্ণযৌবনা রূপসীর মতো বয়ে চলেছে। 
বিজয়া সারা গায়ে আজ গয়না পড়েছে। 
সেকালের ভারী ওজনের বেশ কিছু গয়না আজ তার সাদাথানের ওপর উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। 
সিঁথি রাঙা হয়ে উঠছে সিঁদুরে সিঁদুরে। 
তার আজীবনের সোহাগ-সিঁদুরের সাধ মিটছে না আর। 
বিজয়ার শ্যামবর্ণ মুখ উজ্জ্বল লাল হয়ে দেখা দিল। 
গতজন্মের যাবতীয় না পাওয়া ফেলে দিয়ে বিজয়া আজ অপরূপা সেজেছে। 
সম্মুখে রূপসী নদী দুহাত বাড়িয়ে সখীর মতো ডাকছে। 
বিজয়া দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল জল, ক্রমশ নেমে যেত থাকল গভীরে....

কোথাকার এক রাজ্যে চলে যাচ্ছে বিজয়া। 
সেখানে পরিতাপ নেই,আত্মধিক্কার নেই, নিত্যদিনের বেঁচে থাকার নামে একটু একটু করে মরে যাওয়া নেই। 
সে রাজ্য থেকে বিজয়া শুধু আশা করে যেতে পারে, ভবিষ্যতের বিজয়ারা গা ভরা গয়না পরে, স্বামীর সোহাগ নিয়ে বাঁচতে পারবে। কোনও দশমীর বিকেলে বিসর্জন হবে না সেই বিজয়াদের।

ভালো থাক বিজয়ারা। ভালো থাক তাদের সুখে থাকার আকাঙ্ক্ষা। #শুভ_বিজয়া।।
-Anirban Mandal

একটা বৃষ্টি ভেজা রাত

আজ একটা বড় গল্প আপনাদের জন্য।
অবশ্যই ভালোবাসার গল্প, কস্টের গল্প, ভালোবেসে কষ্ট পাওয়ার গল্প।
তো শুরু করি।
Bhalobasar Golpo - Valobasa
প্রায় রাতে রুপা আমাকে ফোন করে ওয়েটিংয়ে পেত।
আমি কথা ঘুরিয়ে বলতাম ' বাবু আমার ফ্রেন্ড কল করেছিল। রুপা আমার কথা বিশ্বাস করে বলত আচ্ছা
ঠিক আছে।
আমি শান্তিতে নিশ্বাস ফেলে রুপার সাথে ৫মিনিট কথা বলার পর' বলতাম আমার শরীর খারাপ লাগছে - ঘুমিয়ে যাই? 
রুপা আমার কথা শুনে বলত আচ্ছা ঘুমিয়ে পড় তুমি। 
আমি এই ভাবে দিন দিন রুপাকে এভয়েড করতে লাগলাম। 
আমার এখন আর ওকে ভাল লাগে না। 
আমি এই সম্পর্কে বিরক্ত হয়ে গেছি। 
প্রতিদিন ফোনে কথা বলা ' দেখা করা আমার আর ভালো লাগে না। রুপা এইসব হয়তো বুঝতে পেরেছে তাই আর দেখা করার কথা বলে না।
আমি প্রায় রাতে ওয়েটিংয়ে থাকতাম আর রুপা আমায় বার বার কল করত!! 
সে দিন রাতে ৩টার সময় ফোনে কথা বলছি' তখন হঠাৎ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ৫৩টা ফোন কল এসেছে ওয়েটিংয়ে।
আমি ফোন ব্যাক করে শুনতে পারলাম রুপা কান্না করছে!! 
কান্না করে করে আমায় বলল ' আজকে ও কি ফ্রেন্ড কল করেছিল?? আমি রুপার কথা শুনে চুপ করে থাকলাম কিছু বললাম না।

- - দু দিন পর এক বিকালে রুপার সাথে দেখা হল সেই পার্কে। 
যেখানে আমি রুপাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলেছিলাম। 
আজ রুপা নীল শাড়ি পরে এসেছে। 
আমায় দেখে রুপা অনেক খুশি। 
আমি ওর মুখ দেখে বুঝতে পারলাম - রুপা খুশিতে ফোন ওয়েটিং এর কথা সব ভুলে গেছে! 
রুপা আমার পাশে বসে আছে। 
রুপা: তুমি খেয়ে এসেছ? 
আমি : হুম। 
রুপা : বাড়ির সবাই ভাল আছে? 
আমি রুপার দিকে তাকিয়ে বললাম ' হুম ভাল আছে। আমি এখানে রুপার সাথে প্রেম করতে আসিনি!! আমি এসেছি এই সম্পর্ককে এখানেই শেষ করতে। আমার ভালো লাগছে না আর এইসব। 
রুপা ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বার করে বলল ' তোমার জন্য নিজে বানিয়ে এনেছি। তোমার প্রিয় খাবার পাটিশাপটা পিঠে ।। 
আমি রুপার দিকে তাকিয়ে বললাম ' আমি কিছু বলতে চাই তোমায়। রুপা তখন টিফিন বক্স খুলে হাতে চামচ নিয়ে বলল - খেয়ে বলো। আমি রুপার মুখে ভালবাসা আর মিষ্টি হাসি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি আমার মন কঠিন করে বলে দিলাম সব' ব্রেক-আপ এর কথা। আমার
কথা শুনে ওর হাত থেকে চামচ মাটিতে পড়ে গেল - তাকিয়ে থাকল অসহায় হয়ে।। 
তারপর বলল '
২বছরের সম্পর্ক আমাদের আর তুমি বলছ এখন ব্রেকাপ !! 
কোথায় হারিয়ে গেল তোমার সেই সব প্রমিস? 
আমার হাতে হাত রেখে করা ওয়াদা।
আমি রুপার কথা শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি কিছু বলছি না। 
রুপা আবার বলল ' মনে আছে বলেছিলে আমার হাত ধরে 'এই জায়গায় দাঁড়িয়ে- রুপা আমি কোন দিন তোমাকে ছেড়ে যাব না! 
রুপা আমি ভালবাসি তোমায়!! কোথায় গেল সেই সব কথা! কোথায়
হারিয়ে গেল দিপ?? 
আমি রুপার কথা শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর বললাম ' আমি ভালবাসতাম তোমায় কিন্তু এখন আর বাসি না।
আমায় ক্ষমা করে দাও। মনে কর এইসব শুধু টাইমপাস ছিল আর কিছু না। দয়া করে আমায় ভুলে যাও।
বাবা মা যেখানে বিয়ে দিবে সেখানে বিয়ে কর ' দেখবা অনেক সুখে থাকবা।
Bhalobashar Golpo - Valobasa
- - রুপা আমার কথা শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে 'মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। 
ওর চোখ থেকে টপটপ করে জল মাটিতে পড়ছে । 
আমি রুপার কান্না দেখে বললাম ' কান্না করে কি হবে? 
ভালবাসা তো আর জোর করে হয়না। 
আর তা ছাড়া আমার চাকরি নেই - বিয়ে করে তোমায় খাওয়াব কি? রুপা কান্না মাখা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল 'জল খেয়ে থাকতে পারব কিন্তু আমায় ভুলে যেও না। 
আমি বললাম' জল  খেয়ে কি জীবন চলে? 
এই সব সিনেমায় হয়' বাস্তবতা অনেক কঠিন!! 
সে দিন রুপা আমার চোখে চোখ রাখতে পারছিল না। 
শুধু কান্না করছিল। আমি ওর কান্না সেদিন দেখতে পাইনি। 
আমি অমানুষ হয়ে গেছিলাম। 
আমাদের ব্রেক-আপ হয়ে গেল। 
আমি রুপার নাম্বার 'ফোন থেকে মুছে দিলাম। 
রুপা মাঝেমধ্যে আমায় কল করত কিন্তু আমি রিসিভ করতাম না। আমার এইসব বিরক্ত লাগতো। 
বিরক্ত লাগার কারণ তখন আমার আরো একটা বড় লোকের মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে গেছে। 
মেয়েটা আমায় বিয়ে করতে চায়।
ওর নাম হল ইরা। 
ইরার সাথে প্রথম দেখা হয় আমার একটা শপিং মলে। 
তখনও রুপার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল কিন্তু আমি সেই সময় রুপার কথা চিন্তা করিনি। 
ইরা যেদিন প্রথম আমায় বিয়ের কথা বলল ' তখন আমি কোন কিছু চিন্তা না করেই হ্যা বলে দিলাম। 
আমার মনে হয়নি রুপার কথা।
মনে হয়নি একটা বিশ্বাস আমার পথ চেয়ে আছে। 
আর সেই বিশ্বাস এর নাম রুপা।
- - প্রায় প্রতি রাতে রুপা আমায় কল করত আর কান্নাকাটি করতো। আমি বিরক্ত হতাম। 
চুপ করে কান্না করা শুনতাম তারপর বলতাম ' তোমার কান্না করা শেষ' এখন ফোন রাখি? আমি ঘুমাব।
এই বলে ফোন কেটে দিতাম কিন্তু রুপা আমায় আবার ফোন করত তখন আমি বিরক্ত হয়ে ফোন অফ করে দিতাম।। 
সে দিন রাতে ঘুমিয়ে আছি তখন রুপা ফোন করছে। 
আমি ওর কল দেখে বিরক্ত হয়ে বার বার ফোন কাটছি কিন্তু মেয়েটা ভীষণ ছেছড়া!!
কল করছে তো করছেই। শেষমেশ রাগ করে কল রিসিভ করে বললাম' সমস্যা কি তোমার?? 
রুপা আমার কথা শুনে চুপ করে রইল তারপর বলল Happy Birthday To You. 
আমি রুপার কথা শুনে থ হয়ে গেলাম। 
আজকে আমার জন্মদিন?? 
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ইরা আমায় একবারও ফোন করে কিছু বলল না অথচ রুপা ঠিক সেটা মনে রেখেছিল। 
আমি সে দিন রাতে রুপার সাথে একটু ভাল করে কথা বললাম। 
আমি রুপার কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম ওর শরীর ভাল না। 
রুপা ফোন রাখার আগে বলল ' চিন্তা কর না আমি আর ফোন করব না। 
ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো । 
এই বলে ফোন রেখে দিল রুপা।।
- - ইরা অবশ্য পরের দিন আমার জন্ম দিনের উইস করল আর বলল' বাবু আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম রাতে। প্লিজ রাগ করো না। আমি আর ইরার উপর রাগ করে থাকতে পারলাম না। ইরাকে পেয়ে আমি
রুপার কথা ভুলে গেলাম। এখন আর রুপা আমায় কল
করে না। আমি এখন ইরা নিয়ে বেস্ত। ইরা প্রতিদিন
আমার সাথে দেখা করতো কফি শপে। এই ভাবে দিন
চলতে থাকে। আমাদের ভালবাসা বাড়তে থাকে। রাতে
খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে আছি তখন একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। আমি ফোন রিসিভ করে জানাতে পারলাম" এই নাম্বার রুপার ফ্রেন্ড আকাশের।
আকাশ আমায় বলল ' দাদা আপনি কেন এমনটা করলেন রুপার সাথে? রুপা না খেয়ে থাকে -কারো সাথে কথা বলে না। বাড়িতে একা বসে কান্না করে।
দাদা ওর অবস্থা খুব খারাপ। 
এই ভাবে চলতে থাকলে রুপা বাঁচবে না!! 
আমি আকাশের কথা শুনে রাগে ফুলে গিয়ে বললাম ' তোর যখন এতো চিন্তা রুপাকে নিয়ে তা হলে তুই ওর সাথে প্রেম করিস না কেন সালা??
Ekti Bristi Veja Rat - Valobasa
- - আকাশের সাথে কথা বলার সময় - ইরা ৩/৪ বার ফোন ওয়েটিংয়ে পেয়েছে আমার। 
আমি কল ব্যাক করে দেখি মেয়েটা মন খারাপ করে বসে আছে।
আমায় বলল ' তুমি কার সাথে প্রেম করছিলে দিপ?
আমি বললাম কেউ না ইরা ভাই ফোন করেছিল।
কিন্তু ইরা আমার কথা শুনল না। 
মন মরা হয়ে কথা বলল। 
আমি বুঝতে পারলাম ' মেয়েটা আমায় অনেক ভালবাসে। আমি পরের দিন ইরা সাথে দেখা করলাম।
ইরা আমার সামনে মন খারাপ করে বসে আছে। 
আমি চকলেট দিয়ে বললাম ' আমি সত্যি কাল রাতে কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি  ইরা। 
অনেক বোঝানোর পর ইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল ' আচ্ছা বিশ্বাস
করলাম তোমায়। 
আমি ইরার কথা শুনে শান্তিতে নিশ্বাস ফেললাম। 
ইরা আমার হাতে হাত রেখে বলল' আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবোনা দিপ। আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি - বিশ্বাস করি। 
আমার বিশ্বাস নষ্ট করে দিও না।। আমি ইরার কথা শুনে চুপ করে
থাকলাম। 
চিন্তা করতে থাকলাম মেয়েটা আমায় কত ভালবাসে। তারপর বললাম 'না ইরা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না ।'
- - আমি কথা বলা শেষ করার সাথে সাথে একটা ছেলে এসে আমাদের পাশে দাঁড়াল। 
ইরা ছেলেটাকে দেখে চমকে গেল। 
ছেলেটা বলল ' তুমি এখানে কি করছ ইরা?? তুমি না বললে ' তোমার শরীর খারাপ বের হতে পারবা না! 
আমি এইসব শুনে হা।
জানাতে পারলাম এই ছেলেটা ইরার BF.. ইরা ছেলেটিকে বলল' জান আমি কাজিন এর সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি ইরার কথা শুনে হা করে বসে আছি!!!
- - রাতে দাঁড়িয়ে আছি ছাদের। 
আজ রুপার কথা অনেক মনে হচ্ছে। 
আমি খারাপ একটা মেয়ের জন্য রুপার মতন ভাল মেয়েকে ছেড়ে দিলাম! 
আমি কেন বুঝতে পারলাম না - যে মেয়ে প্রথম দেখাতে Love
You বলতে পারে " সে মেয়ে কেমন হতে পারে!!
আমি সে দিন রুপার কান্না দেখিনি। আমি মানুষ না।
নিজের অজান্তে আমার চোখ থেকে জল পড়ল মাটিতে। 
রাতে অনেক গুলো ঘুমের ঔষদ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। 
আর কিছু বলতে পারি না। 
চোখ খুলে দেখি হাসপাতালে আমি। পাশে মা আর বন্ধুরা। 
মা কান্না করছে। বাবা বাইরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।
আমি হাসপাতাল থেকে ২দিন পর ছাড়া পেলাম।
বাড়ি এসে শুয়ে আছি বিছানায়। 
রুপার কথা অনেক মনে হচ্ছে। আমি মাকে বললাম ' মা আমার ফোনটা দিয়ে যাও। 
মা ফোন দিয়ে চলে গেল। আমি ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক
ওপেন করলাম। 
দেখি অনেক গুলো মেসেজ জমে আছে।
তারপর যা দেখলাম তা দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। 
দেখি রুপার বন্ধুদের স্ট্যাটাস - - - রুপা এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে
গেছে!! রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে রুপা ২দিন আগে!!! আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল। আমি ফোন রেখে ছুটে গেলাম রুপার কাছে।।

- - আমি বসে আছি রুপার কবরের সামনে। চোখ থেকে জল টপটপ করে পরছে মাটিতে। আমি তাকিয়ে আছি মাটির নিচে ঘুমন্ত রুপার দিকে।
আমার মনে হল সে দিন এর কথা। 
সেই দিন রুপা আমায় বলেছিল' দিপ আমি জল খেয়ে থাকতে পারব
তোমার সংসারে কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। 
আমি রুপার কথা চিন্তা করে করে কান্না করছি। 
আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। 
আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম' হে ঈশ্বর - আমার ভুল হয়ে
গেছে। আমি আর ভুল করবনা। আমার কাছে রুপাকে
ফিরিয়ে দাও।। 
আকাশে মেঘ জমে আছে। 
আমি কান্না করছি তখন মেঘে বিশাল জোরে গর্জন করে উঠল। 
আমি চমকে গিয়ে উঠে বসলাম বিছানায়।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ২টা!! 
আমি কি এইসব স্বপ্নে দেখেছি এতো সময়?? 
আমি ভয়ে ঘেমে গেছি!! 
তা হলে কি ইরা নামের কেউ নেই? 
আর রুপার সাথে আমার ব্রেক-আপ হয়নি? 
আমি ফোনে ডায়াল লিস্ট দেখলাম। ইরা নামের কারো নাম্বার নেই ' সব নাম্বার রুপার। 
এর মানে এতো সময় সব কিছু আমি স্বপ্নে দেখছিলাম!! 
আমি পাগলের মতন বাইরে গেলাম। গিয়ে দেখি বাইরে
সত্যি বৃষ্টি হচ্ছে আর মেঘ ডাকছে । আমি বাইক নিয়ে রুপার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। 
বৃষ্টিতে আমি ভিজে গেছি। 
Boy In Rain - Valobasa

আমি রুপাকে ফোন করে বারান্দায় আসার কথা বললাম। 
রুপা বারান্দায় এসে ' এতো রাতে আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। বলল 'পাগল হয়ে গেছো তুমি?? 
আমি বললা ' হ্যা রুপা তোমার প্রেমে আমি পাগল হয়ে গেছি। তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই চলে এসেছি।। 
আমি নিচে থেকে উপরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা রুপার সাথে
ফোনে কথা বলেছি। 
রুপা হাসি দিয়ে বলল "পাগল একটা। এই বলে ভেতরে গিয়ে একটা ছাতা এনে উপর থেকে আমার দিকে ছুড়ে দিল।
- - আমি ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছি।
আশেপাশে কেউ নেই। বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝমিয়ে। রুপা আমার দিকে
তাকিয়ে আছে বারান্দা থেকে আর আমি তাকিয়ে

আছি রুপার দিকে। মন ভরে দেখছি দুজন দুজনাকে।।

অ্যারেঞ্জড ম্যারেজেও ভালোবাসা হয়

অ্যারেঞ্জড ম্যারেজেও ভালোবাসা হয়। 
Love in Arranged Marriage
Love in Arranged Marriage

বাসর ঘরে ঢুকে পাশে বসতেই বৌ আমাকে বলল,
----------------ঘড়িতে তাকিয়ে দেখুন তো কয়টা বাজে??
বাসর রাতে বৌয়ের এমন সাহসী প্রশ্নে কিছুটা বিচলিত হলাম।
তখন ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ২.৩০মিঃ।
আমি বৌয়ের পাশে বসে আস্তে করে বললাম----
শোনো, আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই ছিলো না। 
আমার বাবা-মায়ের পছন্দেই তোমাকে বিয়ে করেছি।
তবে আমার কারো সাথে কোন সম্পর্ক ও নেই।
কিন্তু আমি বিয়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।
তাই আমি এখন চাইলেও এত সহজে তোমাকে বউ হিসেবে মানতে বা বৌয়ের অধিকার দিতে পারবোনা।
কথা গুলো বলে শেষ করা মাত্রই নতুন বউ আমার পাঞ্জাবির কলারটা চেপে ধরে বলল,
--------------আমাকে কি খেলার পুতুল মনে হয় নাকি??
পছন্দ হয়নি, বিয়ে করতে চাননি এইটা আগে বলতে পারলেন না??
নিজের মায়ের মন রক্ষা করতে আমার সব আশা-স্বপ্ন কে কেন বলিদান দিতে হবে?
বিয়ে করার ইচ্ছে নেই, এইটা আমাকে আগে বললেই পারতেন।
তবেই আমি আমার পক্ষ থেকে বিয়ে ভেঙে দিতাম।
মায়ের প্রতি ভন্ড ভক্তি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে আমার জীবনটা কেন এইভাবে নষ্ট করে দিলেন হুম?
আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি।
এখন আমি যেভাবে বলব সেভাবেই সব হবে। ঠিক আছে????
বলেই কলার টা ছেড়ে দিলো।
পরে আবার বলল....
----আচ্ছা যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
দিতে হবে না আপনাকে বউয়ের অধিকার।
যান নিচে গিয়ে ঘুমান।
একদম খাটে ঘুমাতে পারবেন না।
বলেই আমার বালিশ পা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।
আমি ও বাধ্য ছেলের মতো ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম।
আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কেমন গুন্ডি মেয়ে রে বাবা।জীবনেও এমন মেয়ে দেখিনী।
মনে তো হচ্ছে জীবন পুরাই তেজপাতা করে ছাড়বে।
|
|
ফ্লোরে ঘুমই আসছেনা।
কখনই ফ্লোরে ঘুমাইনি।
কিন্ত আজকে নিজের অমতে বিয়ে করার কারনেই ফ্লোরে
ঘুমাতে হচ্ছে।
এর মধ্যে মশার আন্দোলন। 
ইসসসসসস,,,,,,সহ্য হচ্ছেনা।
চোখ বন্ধ শুয়ে করে আছি।কখন জানি ঘুমটা লেগে গেছে
বুঝতেই পারিনি।
হঠাৎই সজাগ হয়ে দেখি আমার শরীরে কম্বল আর পাশে ও মশার কয়েল লাগানো।
মনটাতে একটু স্বস্তি পেলাম,ও মানুষ ভালো, মনে মায়া-দয়া আছে।


পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই দেখি টেবিলে চা রাখা।
চা খেয়ে, ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে ফোন টিপছিলাম তখনই তানিয়া (আমার বৌ) এসে বললো.....
----এইযে সেই কতক্ষন যাবত খাবার নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে
আর আপনি ঘরে বসে আছেন কেন?
এখনি নিচে চলুন আগে......!!
বলেই আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো...
-----নাকি খাবার টা রুমে নিয়ে আসবো?
আমি তো হার্ট এ্যাটাক হতে হতে বেচেঁ গেছি।
আমি তো ভাবছিলাম,বউ বুঝি এইবার ও কলার ধরেই আমাকে খাবার টেবিলে নিয়ে যাবে।
কিন্তু না,বউয়ের স্বর পাল্টে গেছে, তবে কি বউ আমার প্রেমে পড়ে গেল নাকি??
কথাটা ভাবতে ভাবতেই বউয়ের দিকে তাকালাম।
হা হয়ে তাকিঁয়ে আছি, বউ তো আমার হেব্বি সুন্দরী।
রাতে তো ভাবছিলাম হিটলারনি। এখন দেখি না মায়াময়ী।
এইবার যে আমি বউয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।
নিজেই নিজেকে বললাম...
---- মনে হয় তুই তোর হিটলারনি বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছিস।
হঠাৎ একটা বিকট শব্দে বাস্তবে ফিরলাম।
সামনে তাকিঁয়ে বউ আমার ফ্লোরে পড়ে চোখ বন্ধ করে
আছে।
বুঝতে পারলাম,পাগলীটা খুবই ব্যথা পেয়েছে।
দৌড়ে গিয়ে টেনে তুলে বসাতে গেলাম আর অমনি আস্তে করে বলল.....
----কেমন স্বামী গো আপনি??
আমি তো একটু ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে গেলাম।
বললাম...
----আমি আবার কি করলাম।
বৌ বলল....
----আমি মাটিতে পড়ে আছি কই কোলে করে নিয়ে
বিছানায় শোয়াবেন, তা না করে আমার হাত ধরে টানছেন।
সাথে সাথেই আমি কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল....
----ইচ্ছে করে এইভাবেই ধরে রাখি সারাটা জীবন।
কিন্তু আপনি তো আমাকে পছন্দই করেন না।
কথা শেষ করেই তানিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
আমারও বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল।
আমারো খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, কপালে একটা চুমো একেঁ দিয়ে বলি ...
----পাগলী আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি গো।
কিন্তু পারলাম না।
কোথায় জানি একটা বাধাঁ পাচ্ছিলাম।
এই সুযোগে তানিয়া আমাকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালালো।
আমি শুধু ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিঁয়ে রইলাম।
পরক্ষনেই খেয়াল হলো,ও তো ব্যথা পেয়েছে।
যার কারনে কোলে করে উঠাতে হলো।
বুঝতে আর বাকি রইলো না, এইবারও আমাকে বোকা বানানো হয়েছে।
Arranged Marriage

পাগলিটার সাথে খুনসুটি প্রেম করতে করতেই কেটে গেল
২টা বছর।
এখন কেউ কাউকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারিনা।
আমার পাগলীটা এখন গর্ভবতী।
তাই খুব যত্ন নিই তার।
আজকেই বাচ্চা হবার তারিখ দিয়েছে ডাক্তার।
আমি অফিসে ছিলাম, হঠাৎই বাবার ফোন পেয়ে ছুটে
গেলাম হসপিটাল।
গিয়েই শুনলাম আমার ঘর আলো করে এসেছে এক ছোট্ট রাজকন্যা।
কিন্তু....
আমার পাগলিটার কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিনা কেন??
ভয়ে আৎকে উঠলাম।
অনেকের মুখেই শুনেছি,বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে অনেক মা।
সে ভয়েই বাচ্চা নিতে চাইনি।
কিন্তু ওর নাকি বাচ্চা লাগবেই।
ওর ইচ্ছে পূরন করতে গিয়েই কি তবে......???
আর ভাবতেই পারছিনা।
আর একটা মিনিট ও নষ্ট না করে, দৌড়ে গেলাম কেবিনে।
গিয়ে দেখি বাচ্চা টা হাত পা নাড়িয়ে খেলছে।
কিন্তু তানিয়া চোখ বন্ধ করে রেখছে।
ওর নিঃশ্বাস আছে কি নাই তা দেখার মতো ধৈর্য আমার
ছিলোনা।
তাই তানিয়াকে জড়িয়ে চিৎকার করে ফেললাম।
সাথে সাথেই কানের কাছে একটু ব্যথা অনুভব করলাম।
পরে দেখি তানিয়া আমার আস্তে করে কানে কামড় দিয়ে বলল....
-----কি ভাবছিলা তোমাকে একা রেখে চলে যাবো??
আরে না গো, আমি চলে গেলে, তোমাকে জ্বালাবে কে??
আমিও বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।
আর বললাম,বড্ড ভালোবাসি রে পাগলি তোকে।
ছাড়বোনা কখনই। 💗💗