মর্মস্পর্শী গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মর্মস্পর্শী গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ছোট একটা সোনাগাছির করুন কাহিনী

 Valobasa.com Valobasa .com Valobasha.com Bhalobasa.com Bhalobasha.com www.valobasa.com www.bhalobasha.com

ওই দূরে ট্রেন যায়। 

পাশেই একটা ছোট রাস্তা নেমে গেছে। 

সেই রাস্তা দিয়ে মিনিট দুই গেলেই "আঙ্গুরবালার কোঠা", শহরের একমাত্র যৌণ পল্লী। 

পল্লী বলা ভুল, এই একটাই বাড়ি। 

তবে অবৈধ নয়, পারমিশন আছে আঙ্গুরবালার কাছে। 

আঙ্গুরবালা ওই কোঠার মালকিন, নাম শুনেই বোঝা যায়। 

ঊর্ধ্ব পঁয়ত্রিশ এর মহিলা। 

এককালের সুন্দরীর রূপে ঢল নামলেও সাহসে কেউ টেক্কা দিতে পারবেনা। একা হাতে সব সামলায়। কম ব্যপার না।

স্টেশন থেকে কাছে হওয়ায় খদ্দের কম হয়না, পাশেই মদের ঠেক আছে এটাও একটা উপরি পাওনা। 

তবে যত না উপরি লাভ তার থেকে বেশি সমস্যা এই ঠেকটাকে নিয়ে। টোন টিটকিরি তো যাইহোক ওদের গায়ে মাখলে চলে না, কিন্তু মাতাল হয়ে গালিগালাজ আর কোঠায় ঢুকে মেয়েদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি টা পছন্দ হয়না একদম। 

কদিন থেকে সেটা বেড়েছে। 

হ্যাঁ এই পুজোর মরশুম এ অত্যাচার টা বাড়ে। 

পুলিশে বলে দেখেছে, লাভ হয়না তেমন। দুটো হামবড়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওসি আবার একরাত ফ্রি তে চায়। মাদারচোত শালা। 

এটুকু ভেবে নিজেকে ফের শান্ত করলো আঙ্গুর। খুব ধৈর্য্য ধরে না থাকলে ব্যবসা চালাতেও তো পারবেনা। 

আজ কালীপুজোর রাত। 

একটু রাত না বাড়লে আজ খদ্দের হবেনা। 

তবে প্রস্তুতি টা নিতে তো হবেই। তাই সাজগোজ চলছে। 

আঙ্গুর সহ বাকি সবাই নিজের নিজের রুমে আয়নার সামনে ব্যস্ত। চোখের কাজল আর গালের লালি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে মনের অনিচ্ছা গুলো। যেনো চরিত্রের উপর টাকার একটা মোটা প্রলেপ।

"বড়মা..বড়মাআআআ.." হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকলো পলু। 

পলু এই বাড়ির একমাত্র ছেলে। বছর সাতেক বয়স। 

ওর মা এখানেই কাজ করতো, ডেলিভারির সময় মরে গেলো আর সেই থেকেই আঙ্গুর ওকে মানুষ করছে। 

"কি হলো পলু? এই তিনি সন্ধ্যেবেলা কোথায় গেছিলি?"

হাঁফানি থামিয়ে ঢোক গিলে পলু বললো, " তিন্নি দিদির সাথে"

চমকে উঠলো আঙ্গুর। 

মেয়েটা এই দু হপ্তা হলো এসেছে কোঠায়। 

ওর বাবা ওকে বিক্রি করে দিয়েছিলো। 

শেষমেশ এখানে ঠাঁই হয়েছে। 

আজ ওর মাসিক শুরু হয়েছে সকালে। 

কিন্তু কাউকে বলেনি ভয়ে। ব্যবসার রমরমা সময়ে ওসব হলে তো খুব লস। কাওকে তাই বলতে পারেনি ভয়ে। 

শেষে যখন জানা গেলো তখন বাকি মেয়েদের সে কি খিস্তাখিস্তি! 

সে তো ভালো যে আঙ্গুর ঠিক সময়ে গিয়ে এক থাপ্পড় মেরেছিল টুনি কে, "আমার কোঠার মেয়ে আমি বুঝবো, তুই নিজের খদ্দের সামলা। কদিন থেকেই তোর রিপোর্ট ভালো আসছেনা। কিছু বলিনি এদ্দিন কিন্তু এসব করলে তোর কপালে দুঃখু আছে বলে দিলাম।" এই বলে তিন্নি কে জড়িয়ে নিয়ে আঙ্গুর ওর হাতে দুটো নোট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, "সন্ধ্যেবেলা যাস ওই রোডের ধারে ওষুধের দোকানে কিনে আনিস।"

কোঠায় কেউ ওসব ব্যবহার করেনা। কাপড় দিয়েই চলে, কিন্তু তিন্নির মায়া ভরা মুখটা এমনই যে...

"তিন্নি দিদি কই?" পলু কে জিজ্ঞেস করলো আঙ্গুর। মুখে ওর চিন্তার ঘাম। 

"ওরা ধরে নিয়ে গেলো বড়মা।"

"কি বলছিস? কারা? কোথায় নিয়ে গেলো? বল।"

" হারু... ওই বেলতলার মাঠে..."

"হারু?!" বুক টা ধড়াস করে উঠলো আঙ্গুরের। হারু হলো পাড়ার পলিটিক্যাল গুন্ডা। এই সামনের ঠেকেই মদ খায় রোজ আর খিস্তি আউড়ায়। খুন, রাহাজানি কি নেই ওর নামে! ওর পাল্লায় পড়লে তো...

দুশ্চিন্তায় কেঁপে উঠলো আঙ্গুর। দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে হাঁক পাড়লো, "টুনি.... আমি বেরোলাম। তুই দরজা বন্ধ করে রাখ আমি না এলে খুলবিনা।

"কিন্তু বড়মা খদ্দের..."

"যা বললাম কর আর পুলিশে ফোন করে বল বেলতলায় মাঠে যেতে। খুব বিপদ।"

দরজা টা দড়াম করে লাগিয়ে ছুট দিলো আঙ্গুর। 

পিছন পিছন ছুটছে পলু। 

বেলতলায় যখন পৌঁছালো তখন সেখানে লোক জড়ো হয়ে গেছে। ভিড় ঠেলে ঢুকতেই দেখলো মাঠের পাশে পড়ে আছে ফুটফুটে মেয়েটার শরীর, রক্তে ভেসে যাচ্ছে শাড়ি, আর চোখ বেয়ে গড়িয়ে আসছে নিথর জলের ধারা। 

আঙ্গুর হুড়মুড়িয়ে গিয়ে বসে পড়লো তিন্নির কাছে।

"তিন্নি, এই তিন্নি, ওঠ মা কি হয়েছে বল।" চারপাশে তাকিয়ে চিৎকার করলো, "এই তোমরা হাত লাগাও। নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে, ওই.. কি হলো রে শুয়োরের বাচ্চা শুনতে পাচ্ছিস না! তোদের পায়ে পড়ি একটু হেল্প কর।" 

নাহ্ কেউ এলো না। 

বেলতলার পাশেই একটু দূরে একটা কালীপুজো হয়, অনেক বছরের পুরোনো আর বেশ বড়ো। 

লোকগুলো হয়তো পুজো দেখতেই এসেছিলো। কিন্তু মায়ের হাতে অসুরের নিধন দেখার থেকে হয়তো অসুরের হাতে মায়ের সম্মান হরণ দেখে বেশি মজা পেয়েছে। 

রাগে কষ্টে গা রিরি করে উঠলো আঙ্গুরের কিন্তু কাঁদলো না। 

পলু কে বললো, "তুই এখানে থাক আমি মন্দিরের কাছে যাই। 

ওখানে পুরুত কাকা আছে, যদি কিছু হেল্প করে।"

আঙ্গুর ছুট লাগালো মন্দিরের দিকে। পুরোহিত আশীষ বাবু প্রৌঢ় ভদ্রলোক, খুব ভালো মনের ও উপকারী। সবার সাথে সমান ভাবে ভালো ব্যবহার করা তাঁর গুণ। এখন সেই শেষ আশা আঙ্গুরের।

মন্দিরের কাছে আসতেই আঙ্গুরের সেই আশার আলো টাও যেনো দপ করে নিভে গেলো। 

হারু আর তার মাতাল দল চত্বরে গোল করে বসে যেনো তামাশা জুড়েছে। 

সেখান থেকে ভেসে আসছে আজকের শিকার কাহিনীর পৈশাচিক উল্লাস। "শালা কচি মাগী ছিলো। অমন টাইট মাল আগে ঠাপাইনি শালা। ওহ্" ..ভেসে এলো ওদিক থেকে। 

আঙ্গুর কানে হাত দিলো, মনে পড়ে যাচ্ছিলো ওর বিশ বছর আগের কথা, যখন এভাবেই রেপ করে ওকে বেচে দেওয়া হয়েছিলো কলকাতার এক বাজারে। 

সেই শব্দগুলো যেনো ফের প্রতিধ্বনি হয়ে চলেছে, আরো একবার। কিন্তু কানে হাত দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

" মাগীর নখরা দেখছিলি? এমন ভাব শালী যেনো সতি সাবিত্রী। রোজ রাতে তো দিস একদিন নাহয় হারুকে দিলি!"

"কি গুরু, মাসিকের মাগী কিন্তু আজ বউনি হলো, কি বলো?" আবার সেই অট্টহাসি..!

পেশী শক্ত হয়ে উঠলো আঙ্গুরের। 

কি জানি কি ভর করলো ওর উপর। শান্ত ভাবে এগিয়ে গেলো মন্দিরের দিকে। 

মা কে প্রণাম ঠুকে হাতে তুলে নিলো বলিদানের খাঁড়া টা। 

তারপর ধীরে ধীরে কখন যে ওই গোল করে বসে থাকা জানোয়ারদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, মদের ঘোরে কেউ টের ও পায়নি। আশেপাশে যে কটা লোক ছিল তারাও যেনো স্তম্ভিত হয়ে গেছে। হারুর পিঠে পা দিয়ে একটা টোকা দিলো আঙ্গুর। 

হারু "কে রে শালা" বলে ঘুরে তাকাতেই একটা মসৃণ শান্ত হাসি দিলো আঙ্গুর আর তারপরেই.....

রক্তের উপর বসে খেলছিলো আঙ্গুর যখন পলু ছুটে এলো। 

শিশু যেমন কাদার উপর খেলে, ঠিক সেভাবে। "তিন্নি দিদির জ্ঞান ফিরেছে বড়মা।" 

কথা কানে গেলোনা আঙ্গুরের। 

আজ মায়ের যে তৃষ্ণা মিটেছে। পশুর রক্তের তৃষ্ণা। 

হাজার বছরের বলিদানে যা মেটেনি, যা মেটা উচিত ছিলো না, আজ মানব পশুর রক্তে তা শান্ত হয়ে গেছে।।

না মেলা অঙ্ক

 

বাবা যেদিন বাজার থেকে আধা কেজি খাসির মাংস  কিনে আনতেন সেদিন আমাদের ঘরে একটা বড় উৎসব আমেজ ভাব চলে আসত।

মা শাড়ির আচলকে কোমড়ে গুজে জিরা মসলা বাটতে বসে যেতেন। আমি কাচা মাংসগুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখতাম,মুখের কাছে নিয়ে গেলেই মা দিত বকুনী।বলত "কাচা গিলে খাসনে,পেটে ছাগল  হবে"।

আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে মা কে বলতাম "ছাগল  হলে বেশ হবে মা, রোজ ই তো তাহলে মাংস  খেতে পারব চিবিয়ে চিবিয়ে"।

মা আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখ করে বলত "আমার পাগল ছানা একটা"।

খানিকটা দূরে বসে মা ছেলের খুনসুটি দেখে বাবা ঠোটের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেন।

একসময় মশলা  মিশিয়ে মা ঝোল ঝোলকরা মাংস উনুন থেকে নামাতেন। আমি দৌড়ে হামলে পড়তাম।একটা চামচে এক টুকরো আমায় বাড়িয়ে দিয়ে মা বলতেন -"ধর খোকা, নুন হয়েছে কিনা দেখ"। আমি প্রথম টুকরো খেয়ে দুষ্ট গাল করে বলতাম -"এক টুকরোয় কি বুঝা যায়? আরেক টুকরো দাও না মা, খেয়ে ঝটপট বলে দিই। মা আরেক টুকরো দিত। আমিও খেতাম। স্বাদ করে খেতাম। আর মায়ের শাড়ির আচলে আয়েশ করে মুখ মুছতাম।

সেদিন বাবা এক আড়াইশো মাংস এনেছিল। এত কম এনেছে কেন জানতে চাইলে বাবা মুখ মলিন করে বলেছিল "আজকের ছাগলটা তোর মত বাচ্চা, তাই মাংস  কম দিয়েছে"।

সবে এক দুই গুণতে শিখেছি। মা যখন মসলা বাটায় ব্যস্ত তখন মাংস  গুলো ধরতে ধরতে আনমনে গুণে দেখলাম মোট পনের টুকরো মাংস  আছে।

একসময় মা আলু মাখিয়ে ঝোল করে মাংস  রাধে। তিন টুকরো আমায় দেয় নুন ঝাল  পরখ করার জন্যে। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর বারো টুকরো আছে।

রাতে মা প্লেটে করে আরো পাঁচ টুকরো ভাত মাখিয়ে দলা করে আমায় খাওয়ায়। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর সাত টুকরো আছে।

এরপরের দিন সকালেও আমার প্লেটে মাংস  আসে।দুপুরেও মাংস  আসে। খেতে খেতে হঠাৎ হিসেবে গন্ডগোল বেঁধে যায়। হিসেব করে দেখলাম বারো টুকরো মাংসই আমার পেটে।

বাবা খায়নি, মা ও খায়নি।

অনেক বছর পর আমি যখন অংক করানো শিখলাম।হঠাত অংক করতে করতে একদিন একটা অংক মিলালাম-

এক আড়াইশো মাংস যদি পনের টুকরো হয়। তবে আধা কেজি মাংস  তিরিশ টুকরো। যদি পাঁচ টুকরো করে ভাগ করা হয় তবে তিনজনে দুই বেলা খেতে পারবে। কিন্তু যেবার বাবা আধা কেজি মাংস  আনতেন প্রত্যেক বারই আমার ভাগে পাঁচ টুকরো করে মোট ছয় বেলা মাংস  জুটত।

পাঁচ টুকরো করে ছয় বেলা।

অংকটার উত্তর:-

"বাবা-মা কোনদিনই মাংস  খাননি"।

আর অংকটার মন্তব্য:-

অথচ  বাবা-মায়ের দুইজনেরই খাসির মাংস ভীষণ প্রিয় ছিল।

আজ আমার ৪ তলা ফ্লাটে থাকি তিনজন। আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে। প্রতিদিনই প্রায় খাসির মাংস কেনা হয়। আগের মত আধা কেজি না। ২ কেজি, ৩ কেজি। কিন্তু আগের মত সেই উচ্ছাস আর নেই, নেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ, নেই বাবার মুচকি হাসির মাঝে অফুরন্ত ভালবাসা।

মা বাবা দুজনেই আজ অনেক দূর থেকে আমার না মেলা অঙ্কের হাসিতে হেসে যাচ্ছেন  ......।

কে বলে আমার সন্তান মানুষ হয়নি - এক মাস্টারমশায়ের গল্প


 

একটা আন্তর্জাতিক সেমিনার শেষে দেশে ফিরছিলাম। প্লেনে উঠে সুন্দরী এয়ার হোস্টেসের দেখিয়ে দেওয়া সিটে আরাম করে বসলাম। প্রায় পনেরো ঘণ্টার একঘেয়ে ননস্টপ জার্নি। আটলান্টিকের উপর দিয়ে বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল কে একপাশে রেখে উড়ে যাবো প্রথমে দুবাই। সেখান থেকে আবার কলকাতায় নিজের দেশে। যদিও এই বিদেশী এয়ারওয়েসের ব্যবস্থা খুব ভাল তবুও এত লম্বা জার্নি করতে ভাল লাগে না আর।

একটা গল্পের বই এর পাতায় চোখ রেখেছিলাম। তখনো টেক-অফ করতে একটু দেরি ছিল। হঠাৎ কানে ভেসে এলো বঙ্গভাষা। যথারীতি একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝে নিলাম কথার উৎস স্থল আমার সামনের রো ছেড়ে তার পরের রো। এখান থেকে যেটুকু চোখে পরল এক জোড়া বৃদ্ধ বৃদ্ধা ; একজনের চকচকে টাকের চারপাশে সাদা পাকা চুলের সমারোহ, অন্য আরেক জনের সাদা চুলের খোপার মাঝে কয়েকটা কালো চুল কিছুটা যেন বলছে স্মৃতি টুকু থাক। খুব নিচু স্বরে উত্তপ্ত কিছু আলোচনা হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম। এভাবে উঁকিঝুঁকি মারাটা অশোভন, তাই নিজেকে সংযত করে গল্পের বইয়ের পাতায় মন দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু টুকরো টুকরো কয়েকটা শব্দ ভেসে এসে আমার কানে ঢুকছিল, তার মধ্যে আমার জন্মস্থানের নামটা দুবার কানে আসায় কৌতূহল বেড়েই চলল। টয়লেট ঘুরে ফেরার সময় ভাল করে লক্ষ্য করলাম।

বহু বছর পর আমার স্কুলের হেড স‍‍্যার শ্রী শুভময় চ‍‍্যাটার্জীকে দেখে চিনতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছিল। ততক্ষণে প্লেন মাঝ আকাশে। ওনাদের পাশের সিটটা খালি দেখে এয়ার হোস্টেস কে বলে ওখানেই বসলাম। আমি বসায় ওনারা চুপ করে গেছিলেন। আমি হাত জোর করে নমস্কার করে বললাম -"স‍‍্যার, আমি নীলাদ্রী ঘোষাল। ৯২ র মাধ্যমিকের ব্যাচ স‍‍্যার, মনে পরছে?"

হাই পাওয়ার লেন্সের ভেতর থেকে দুটো ঘোলাটে চোখ আমার দিকে ফিরে তাকাল। আস্তে আস্তে চোখের দৃষ্টি উজ্জ্বল হয়ে উঠে সারা মুখে সেই সুন্দর হাসি ছড়িয়ে পরল। বললেন - "নীল..... ঘোষাল বাবুর ছেলে!! শুনেছিলাম বড় বিজ্ঞানী হয়েছিস, খুব নাম হয়েছে তোর..."

শেষ কথাটায় কেমন একটা শ্লেষের সুর বেজে উঠলো। মাসিমাকে নমস্কার করে বললাম - "সুজয়দার কাছে এসেছিলেন?"

সুজয়দা হেড স‍‍্যারের একমাত্র ছেলে, আমার থেকে দু বছরের সিনিয়র ছিল। বড় ইঞ্জিনিয়ার, পিটসবার্গে থাকে জানতাম।

মাসিমা মাথা নেড়ে মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে চেয়ে মেঘ দেখতে লাগলেন। স‍‍্যার ও গম্ভীর হয়ে গেছিলেন। বললাম, - "কতদিন ছিলেন ওখানে? কোথায় কোথায় ঘুরলেন স‍‍্যার?"

- "ছিলাম প্রায় দুমাস। ছেলে আর বৌ খুব ব্যস্ত, তাও ঘুরিয়েছে টুকটাক।" স‍‍্যার বললেন।

একবার মনে হল নিজের সিটে ফিরে যাই, ওনারা বোধহয় কথা বলতে চাইছেন না। কিন্তু যেতে গিয়েও পারলাম না। হেডস্যারের কাছে দীর্ঘদিন পড়েছিলাম, খুব কাছ থেকে ওনাকে দেখেছিলাম। উনি ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। এতো সুন্দর করে সব কিছু বোঝাতেন, পড়ানো ছাড়াও অনেক কিছুই ওনার থেকে শিখেছিলাম। পয়সা নিয়ে প্রাইভেটে উনি কোনোদিন পড়ান নি। তবে আমাদের পাশের চা বাগানের বস্তি গুলোতে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় বিনা-পয়সায় অনেককে পড়াতেন। এছাড়া বই পত্র দিয়ে গরীব ছাত্রদের যথেষ্ট সাহায্য করতেন। কত গরীব ছাত্রর পরীক্ষার ফি দিয়ে দিতেন প্রতিবছর। 

মাধ্যমিকের আগে বাবার ভীষণ শরীর খারাপ হয়েছিল। বহুদিন বাবা বিছানায় ছিল। জমানো টাকা কড়ি সব শেষের দিকে। আমাদের একটুকরো জমি মা বিক্রি করবে ভেবেছিল সে সময়। কিন্তু স‍‍্যার কোথা থেকে খবর পেয়ে একদিন এসে মাকে বলেছিলেন জমি বিক্রি করতে না।আমার দায়িত্ব উনি নিয়েছিলেন। কয়েক মাস ওনার বাড়ি খাওয়া দাওয়া করে পড়াশোনা করেছিলাম। মাসিমা নিজেদের গরুর দুধ, গাছের ফল , পুকুরের মাছ, লাউ , কুমড়ো শীতের সবজি সব আমার হাত দিয়ে মা কে পাঠাতেন। আমাদের গাছের নারকেল সুপুরি স‍‍্যার নিজে দাঁড়িয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেই টাকায় বাবার চিকিৎসা হয়েছিল।

কোনোদিনও কোনো ছাত্রকে বকতে বা শাস্তি দিতে দেখি নি ওনাকে। একবার আমার বন্ধু তরুণ কারো টিফিন চুরি করে খেতে গিয়ে ধরা পরেছিল। তরুণের মা পাঁচ বাড়ি কাজ করে ওকে পড়াতো।ও টিফিন কখনোই আনত না। স‍‍্যার সব জানতে পেরে ওকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে খাইয়ে ছিলেন। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন দুপুরেই স‍‍্যারের বাড়ি ওকে খেতে ডাকতেন মাসিমা।

মাসিমার ছিল দয়ার শরীর, সব ছাত্রদের মাতৃস্নেহে ভালবাসতেন। আমরা কখনো কোনো কাজে গেলে মাসিমার হাতের নাড়ু , তক্তি খেয়ে আসতাম। সুজয়দা পড়াশোনায় মেধাবী ছিল। অনেক কষ্টে স‍‍্যার ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়ে ছিলেন। স‍‍্যারের ইচ্ছা ছিল না ও বিদেশে যাক। স‍‍্যার পড়ানোর সময় সর্বদা বলতেন দেশের সব স্কলার ছেলেরা বাইরে চলে গেলে দেশের উন্নতি হবে কি করে? আজ নিজের খুব লজ্জা লাগছিল এই কথাটা মনে পরায়। আমিও বহু বছর বাড়ির বাইরে, যদিও দেশের মাটিতে বসেই আমি গবেষণা করছি।

আমিও স‍‍্যারের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ডাক্তারি পাস করে প্রথম কিছুদিন এক গ্রামীণ হাসপাতালে ছিলাম। রাজনৈতিক পার্টির দাপটে আর রুগীদের আত্মীয় দের অত্যাচারে সব নীতি বিসর্জন দিয়ে কয়েক মাসেই পালিয়ে এসেছিলাম। তারপর পড়তে বাইরে এসে গবেষণায় ঢুকে গেছিলাম। বিদেশে কাটিয়েছি বহু বছর। বাবা মা বহুবার ফিরতে বললেও ফিরতে পারি নি। অবশেষে বাবা মারা যেতে ফিরে এসেছিলাম।তারপর গবেষণার জন্য ব‍‍্যঙ্গালোরে চলে যাই। গত পাঁচ বছর ব‍‍্যঙ্গালোরেই আছি। 

একটা এয়ার বাম্পে পরে প্লেনটা লাফিয়ে ওঠায় সম্বিত ফিরল। দেখলাম স‍‍্যার একটা বই পড়ছেন। এয়ার হোষ্টেস সবাইকে খাবার দিচ্ছিলেন। ওনারা নিরামিষ খাবার নিলেন। স‍‍্যার আমায় জিজ্ঞেস করলেন - "তোর ফ‍‍্যামেলি কোথায়? একা যাচ্ছিস !!"

আবার একটা ধাক্কা, ঝনক আমাকে ছেড়ে চলে গেছির দশ বছর আগেই। আসলে বিদেশে এসে আমার কাজের চাপ এতো বেশি ছিল ওকে সময় দিতে পারতাম না। ওর কোনো বন্ধু ছিল না। একা কোথাও যেতে পারতো না। অবসাদে ভুগে ভুগে শেষ হয়ে যাচ্ছিল ও। দশ বছর আগে ফিরে গেছিল একাই। যদিও ডিভোর্স হয় নি কিন্তু যোগাযোগ ছিল না বহু বছর। ও ওর বাবা মা এর কাছেই থাকত। দেশে ফিরে ফোনে কয়েকবার কথা হয়েছিল। একবার দেখা করেছিলাম। স‍‍্যারকে অর্ধসত্য বললাম যে ও দেশেই আছে।

মাসিমা বললেন - "বাঃ, ভাল, তোমার মা অন্তত বৌ নাতি নাতনি নিয়ে আনন্দে আছেন তাহলে।" লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না।

মাসিমা বলে চলেছিলেন - "আমার ছেলেটা কি করে এতো বদলে গেল জানি না। আমাদের বোধহয় কোথাও কোনো ফাঁক ছিল।" ওনার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরল।

- "আঃ, কি হচ্ছে!! নিজেকে সামলাও।"  স‍‍্যার একটা চাপা ধমক দিলেন যেটা ওনার চরিত্রের সাথে বেমানান। 

- "কেন চুপ করবো? এভাবে ফিরে যাচ্ছি..... ওখানে গিয়ে সবাইকে কি বলবো বল তো? জমি বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়ে এলে তুমি ...."

- "সে কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। আগে তো পৌঁছাই।" স‍‍্যার উত্তর দিলেন।

বুঝতে পারছিলাম কোথাও তাল কেটে গেছে। বললাম - "স‍‍্যার, আমি আপনার ছেলের মতো। আমাকে খুলে বলবেন কি হয়েছে? যদি আমি কিছু করতে পারি ........"

- "সবে চার ঘণ্টা কেটেছে। এখনো ১১ ঘণ্টার পথ বাকি। তুই দেশে ফেরার আগেই সব জেনে যাবি।" স‍‍্যার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।

-  "সুজয় আর ওর বৌ বহু বছর বিদেশে। বহু বছর পর এ বছর সুজয়ের ছেলে হয়েছিল, বহুদিন ওরা দেশে আসে না। সুজয় আমাদের পাকাপাকি ওর কাছে চলে আসতে বলেছিল অনেক দিন ধরেই। ওরা ওদেশের গ্রীনকার্ড পেয়ে গেছিল। এতদিন আসি নি। কিন্তু নাতির ফটো দেখে তোর মাসিমাকে আর রাখতে পারলাম না। সুজয় চাইছিল আমরা পাকাপাকি ভাবে চলে যাই। ও নিজে এসে সব ব্যবস্থা করে জমি বাড়ি সব বিক্রি করে আমাদের নিয়ে গেছির দু মাস আগে। আমার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এই বেকার বৃদ্ধর কথায় কেউ কান দেয় নি। এখানে এসেই বুঝলাম ওদের আসলে বাচ্চা দেখার জন্য আয়ার দরকার ছিল। ক্রেস গুলো ছমাসের আগে বাচ্চা নেবে না। বৌমা বাধ্য হয়ে আমাদের আনিয়েছিল। বাচ্চার ছমাস হতেই ওকে ক্রেসে দিয়ে আমাদের ফেরার টিকিট ধরিয়ে দিল ছেলে। বলল শীত আসছে, আমাদের কষ্ট হবে ঠাণ্ডায়। কোনও বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে নেট ঘেঁটে।" স‍‍্যার এটুকু বলেই চোখ বুঝলেন।

- "বাচ্চাটা এই দুমাসেই আমাদের ন্যাওটা হয়ে গেছিল। খুব মুখ চিনত। দেখলেই দু হাত বাড়িয়ে কোলে উঠতে চাইত।" মাসিমা কান্না ভেজা গলায় বললেন।

- "জমি বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়েছি। টাকা পয়সা সব নাতির নামে করে দিয়েছিলাম। আমাদের আর কি প্রয়োজন!! কিন্তু এখন ভাবছি কি করবো!!" স‍‍্যার বললেন।

সুজয়দাকে যতটুকু দেখেছিলাম পড়াশোনা ছাড়া কিছুই জানত না। আজ নিজের বাবা মা কে এভাবে অবহেলা করেছে শুনে খুব রাগ হল। আমাদের পাশের বাড়ির নগেন জেঠুর ছেলে কলকাতায় ভাল চাকরী করতো। বাবা মা কে সেভাবে দেখত না। বহু পুরানো জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙ্গে পরছিল। মেরামতের দরকার ছিল। ওনাদের ও চিকিৎসার দরকার ছিল। স‍‍্যার স্কুলের সব ছাত্রদের নিয়ে নিজেই ওনাদের বাড়ি মেরামত করে দিয়েছিলেন। চিকিৎসাও করিয়েছিলেন। এমনি টুকরো টুকরো বহু কথা মনে পরছিল।

আলম বলে একটা মুসলিম ছেলে পড়তো আমাদের সাথে। ওর বাবা ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পরে গুলি লেগে মারা গেছিল। সবাই ওকে একঘরে করেছিল ডাকাতের ছেলে বলে। একমাত্র স‍‍্যার আমাদের বুঝিয়ে বলেছিলেন কেউ শখ করে ডাকাত হয় না। আর ওতে আলমের কোনো দোষ নেই তাও বলেছিলেন। সস্নেহে আলমের চোখের জল মুছিয়ে ওকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। সেই আলম আজ একটা এনজিও চালায়। বন্ধ চা বাগানের পরিবার গুলোকে সাহায্য করে নানা ভাবে। সেদিন স‍‍্যার ওর পাশে না দাঁড়ালে ভেসে যেতো ও। হয়তো বাবার থেকেও বড় ডাকাত তৈরি হত একদিন।

আমাদের উত্তরবঙ্গে বর্ষা কালে পাহাড়ি নদীতে খুব হড়কা বান আসতো। সেবার নাগরাকাটা টাউনটা রাতারাতি ভেসে গেছিল ডায়না নদীর জলে। কত লোক যে গৃহহারা হয়েছিল হিসাব নেই। গরমের ছুটি চলছিল স্কুলে। হেডস্যার একাই নেমে পরেছিলেন সাহায্য করতে। স্কুলে ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল গৃহহারা পরিবার গুলোকে। আমদের কয়েকজনকে নিয়ে স‍‍্যার একাই ঐ বৃষ্টিতে ঘুরে ঘুরে সাহায্য তুলে ওদের কয়েকদিন খাওয়া দাওয়া শুকনো জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। সরকারী সাহায্য এসেছিল বেশ কিছুদিন পরে। সে বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন স‍‍্যার। আজ ওনার ছেলের কৃপায় ওনার ঠিকানা হতে চলেছে বৃদ্ধাশ্রম। মনটা খচখচ করছিল।

দুবাইতে নেমে স‍‍্যার আর মাসিমাকে বসিয়ে চটপট কয়েকটা দরকারি কাজ করে নিলাম। মেল পাঠানোর ছিল কয়েকটা। এতো বড় জার্নি তে মাসিমার শরীরটা একটু খারাপ করেছিল। তিনঘণ্টা পর কলকাতার ফ্লাইটে উঠে আমার সিটটা বদলে ওনাদের কাছেই বসেছিলাম। স‍‍্যার বললেন - "একটা উপকার করবি নীল, তত্কালে আমাদের উত্তরবঙ্গে যাওয়ার টিকিট করে দিতে পারবি? ওখানেই সারা জীবন কাটিয়েছি। ওখানেই শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চাই। তোর মাসিমারও তাই ইচ্ছা। ঐ বৃদ্ধাশ্রম কে না বলে দেবো। যে কটা টাকা পেনসিয়ান পাই তা দিয়ে আমাদের চলে যাবে। একটা এক-কামরার বাড়ি ভাড়া নিয়ে নেবো।"

এবার আমার চোখের কোন ভিজে উঠেছিল। বললাম - "আপাতত আমার উপর সব ছেড়ে দিন। ব্যবস্থা করছি।"

দমদম এয়ার পোর্টে লাগেজের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম ওনাদের নিয়ে। নেট ওয়ার্ক আসতেই কয়েকটা দরকারি ফোন করে নিলাম। বাইরে আসতেই চোখে পরল স‍‍্যারেদের নাম লেখা একটা বোর্ড হাতে বৃদ্ধাশ্রমের লোক দাঁড়িয়ে। কত আধুনিক ব্যবস্থা করেছে সুজয়দা!!

ওনাদের নিয়ে বাইরে এসে দেখলাম কাজল, অনীশ, রাহুল , তরুণ, প্রতিকদা সবাই ওয়েট করছে। সবাই ছুটে এসে স‍‍্যারের ট্রলিটা টেনে নিলো। আমি পরিচয় করালাম স‍‍্যারের সাথে ওনার সব প্রাক্তন ছাত্রদের, আজ সবাই নিজের নিজের জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার মেল পেয়ে সবাই আজ ছুটে এসেছে স‍‍্যারের জন্য। আলম ও কলকাতায় এসেছিল কোনো কাজে। কিছুক্ষণের মধ্যে ও এসে গেলো। রাহুলের ফ্ল্যাট বাগুইহাটিতে, ওখানে সবাই মিলে স‍‍্যার আর মাসিমাকে নিয়ে গেলাম। আলম জানালো সে স‍‍্যারদের নিয়ে যেতে চায়। ওদের এনজিও একটা অনাথ আশ্রম খুলেছে ওখানেই। স‍‍্যার কে ওখানেই রাখতে চায় ও। এভাবেই শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে চায় আমাদের হেড স‍‍্যার কে।বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের মাঝে স‍‍্যার খুব ভাল থাকবেন ওর ধারনা। যে কাজ সারা জীবন করেছেন তাই নিয়েই থাকবেন। স‍‍্যার আর মাসিমা রাজি হলেন অবশেষে। 

স‍‍্যার মাসিমাকে বললেন - "কে বলে আমার সন্তান মানুষ হয়নি। এরাও তো আমার ছেলে। আজ কেমন সবাই আমাদের আপন করে নিলো"। স‍‍্যারের চোখে আনন্দের অশ্রু।

সমাপ্ত।

দুগ্গা তোর দাম কতো

Bengali Dura Puja Story

Bangla Durga Puja Golpo
কয়েক কোটি টাকার গয়না পড়া দূর্গা ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম। গরমে ঘেমে নেয়ে ঘন্টা তিনেক দাড়িয়ে দাড়িয়ে পায়ের দফারফা করে রাত বারোটা বেজে দশ মিনিটে যখন ভিতরে ঢুকলাম, শত শত বিনে পয়সার মোবাইল ক্যামেরায় চিত্র শিকারীদের দাপটে মা কে ভালো করে দেখার সুযোগও পেলাম না...(পেন্নাম করা তো দুরের কথা, যদিও মোবাইল ক্যামেরা হাতে আসার পর এখন আর কেউই পেন্নাম করে না, সব গুলি ছবিই বাড়িতে এনে তারপর বোধহয় একসঙ্গে পেন্নাম সেরে নেয় ) এককথায় গলা ধাক্কা না দিয়ে কতৃপক্ষ বের করে দিলো....বাইরে এসে দেখতে পেলাম আসল দুগ্গা ঠাকুর...

পথের ধারে ছেড়া ফাঁটা শাড়ি পড়ে এক মা তার কোলের (হয়ত পিতৃ পরিচয় হীন) শিশুকে আগলে নিয়ে ভিক্ষের বাটি পাশে রেখে অঘোরে ঘুমিয়ে আছে (হয়ত আধ পেটা খেয়ে)...। পেছন ফিরে চেয়ে দেখলাম কোটি টাকার দামি প্যান্ডেল টা...চোখ বুজে মনে করার চেষ্টা করলাম কোটি টাকার গয়না পরিহিত মাতৃ প্রতিমাটিকে .....মনে মনে প্রশ্ন করলাম .....দুগ্গা তুই কি সত্যিই অনেক দামী....?

রাত অনেক... এবার বাড়ি ফিরবো....পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছি যদি কোন ট্যাক্সি পাই...একটু দূরেই একটি অপূর্ব সুন্দরী (ঠিক যেন দূর্গা ঠাকুর) তরুনী একটি ত্রিফলা লাইটের নীচে দাঁড়িয়ে তার আরেক সঙ্গিনী কে বলছে...."আজকেও যদি একজন খদ্দেরও না পাই তাহলে আর কাল ছেলেটার ওষুধ কিনতে পারবো না রে...মা দুগ্গা কে সকাল থেকেই মনে মনে বলছি আজ অন্তত একটা খদ্দের জুটিও মা...."

এমন সময়ই একটা কালো কাঁচের গাড়ি এসে থামল তার সামনে...গাড়ি তে প্রবল স্বরে উন্মাদ নৃত্যের গান চলছে...একটি কালো কাঁচ নামিয়ে একজন অসুর বিশিষ্ট পুরুষ জিজ্ঞেস করলেন-" কিরে! রেট কত...এখন? পুজোর বাজারে ডবল দেব....চারজন আছি...আসবি নাকি?....। মেয়েটি নিঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে উঠে গেলো গাড়ি তে...।যাওয়ার আগে তার সঙ্গের সঙ্গিনীটিকে ফিসফিসিয়ে বলে গেল " দেখেছিস তো মা দুগ্গা আমার কথা শুনেছে...হোক না চারজন... মা দুগ্গা আছে তো....কাল ছেলেটার ওষুধের ব্যবস্থা ঠিক করে দিয়েছে ...।"

আমি আর ফেলে আসা প্যান্ডেল টার দিকে এবার তাকাইনি... কোটি টাকার গয়না পরিহিত মাতৃ প্রতিমাটিকেও আর মনে করিনি....দেখলাম কালো কাঁচের গাড়ি টা আমার দেখা দূর্গা ঠাকুরটিকে নিয়ে চলে গেল.... আসতে আসতে নজরের বাইরে যেতে যেতে অন্ধকার রাস্তায় হারিয়ে গেলো....আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে কেন জানিনা নিজেই হঠাৎ করে বলে উঠলাম

- দুগ্গা তোর দাম কতো? 
-সংগৃহিত

আমি মেয়ে, আমি অবাঞ্ছিত

১৪ বয়সে প্রথম জেনেছিলাম - আমার জন্মের খবর পেয়ে ঠাম্মা মাথায় হাত দিয়ে বারান্দায় বসে পড়েছিল। 
Beautiful Baby Girl - Valobasa
আমি, বাবা মার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান। 
এই ঘটনার ঠিক দেড় বছর পর আমার ভাইয়ের জন্ম হয়। 
ঠাম্মা আমাকে সারাজীবন 'লক্ষ্মীছাড়ী' বলেই ডাকতো। 
ছোটবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলাম বাড়ীতে আমার আর দিদির জন্য এক রকম ব্যবস্থা, আর ভাইয়ের জন্য অন্যরকম। 
পুজোয় ভাইয়ের জন্য চারটে জামা; আমার-দিদির একটা একটা। ভাইয়ের টিফিনবক্সে আপেল-কলা-মিষ্টি। আমার-দিদির যা হোক কিছু। এসব কড়া নিয়মের বাইরে বেরোনোর ক্ষমতা আমার মায়ের ছিলনা। দিদিও কখনো নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেনি। 
কিন্তু আমাকে বারবার ঠাম্মার কাছে শুনতে হয়েছে, -"এ মেয়ের বড় নোলা, ভীষন লোভ, এক্কেবারে অলক্ষ্মী এসেচে কোথা থেকে।
তবুও আমার বায়নার অন্ত ছিলনা। মা মাঝে মাঝেই আমার বায়না মেটাতে, সবাই কে লুকিয়ে পয়সা দিত। দিদিকে কখনো কিছু চাইতে দেখিনি। 
আমি তখন ক্লাস সিক্স-এ। 
স্কুল থেকে ফিরে দেখি মা'র মুখ থমথমে। 
কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করতে পারছি। সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসে দিদি বলল- "তুই মা কে এত বিপদে ফেলিস কেন? 
আজ ঠাম্মা দেখেছে,মার থেকে লুকিয়ে পয়সা নিচ্ছিস।"
আমার থেকে সাড়ে তিন বছরের বড় দিদি সেদিন আমাকে বুঝিয়ে ছিল 'এ বাড়ীতে মেয়েদের কি কি করতে নেই।
মেয়েদের মুখফুটে কিচ্ছু চাইতে নেই;  বেশী কথা বলতে নেই; লাফাতে নেই;  দৌড়াতে নেই। মেয়েদের চিৎকার করতে নেই; ঘুড়ি ওড়াতে নেই;  গুলি খেলতে নেই; পা ছড়িয়ে বসতে নেই;  হা হা করে হাসতে নেই, সব সময় খাই খাই করতে নেই। 

অবাক হয়ে সেদিন আমি ..."নেই"-য়ের ফর্দ শুনেছিলাম।
দিদিকে খুব বেশীদিন এত 'নেই' মানতে হয়নি। আমার রোগা ভোগা দিদিটা বিয়ের ধকল সামলাতে পারেনি। বিয়ের দু'বছর পর, মাত্র বাইশে, শ্বশুরবাড়ীতেই মারা যায়। 

সেদিন প্রথম আমার মা, সারাদিন বিছানায় শুয়ে ছিল। ঠাকুমা, ভাই আর বাবার মানবিকতা বোধকে, সেই একদিনের জন্য কিছুটা জাগ্রত অবস্থায় দেখেছিলাম। সারাদিন কেউ মাকে কোনো ফরমাইশ করেনি। 
সত্যি বলব- এত দুঃখের দিনেও, সেদিন আমার ভালোলাগছিল;  একটাই কথা ভেবে আমার কাকভোরে ওঠা মা, এই সুযোগে, একটা পূর্ণ দিনের বিশ্রাম তো পেল!!
কলেজে এক অধ্যাপক, ফাঁকা ক্লাসরুমে আমার এক বন্ধবীর হাত চেপে ধরেছিল। ব্যাপারটা প্রিন্সিপল্ কে জানাতে গেলাম। তিনি বললেন- "গার্লস কলেজে ওসব হয়েই থাকে। এ'নিয়ে বেশী সোরগোল কোরোনা। আমি দেখছি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।" তিনি যে কি ব্যবস্থা নিয়ে ছিলেন আজও জানতে পারিনি। 
কিন্তু, আমার ভাই ব্যাপরটা কোনো ভাবে জেনে, আমাকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। বাবার সামনে দাঁড়িয়ে সে সোজা ভাষায় আমাকে বলল- "তোর আর সেজেগুজে কলেজ যাবার দরকার নেই। বাড়িতে পড়ে পরীক্ষা দে।"
Baby Girl Studying - Valobasa

আমিতো দিদির মত লক্ষ্মী মেয়ে নই, তাই অন্যের করে দেওয়া ব্যবস্থা, আমার পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি।

আমার 'মেয়েবেলার', আর এক দিনের কথা খুব মনে পড়ে। 
বাড়ীতে কি একটা পুজো ছিল। দিদি মাকে রান্নাঘরে সাহায্য করছে। ঠাম্মা আমাকে ঠাকুরঘরে নিয়ে গিয়ে প্রসাদ, ঘট, ফুল বেলপাতা সাজানোর প্রশিক্ষন দিচ্ছে। পুজোর জোগাড় শেষ হল, আমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হল।  কিন্তু, আমার চোখ তখনো আটকে আছে, নারায়নের জন্য সাজানো প্রসাদী নৈবেদ্যর থালায়। নৈবেদ্যর চূড়ায় চূড়ামনী হয়ে বসে আছে, বেশ বড় সাইজের একটা নলেনগুড়ের সন্দেশ। 
যথা সময়ে পুজো শেষ হল। মা প্রসাদ ভাগ করার তোরজোড় করছে। হঠাৎ‌ ! সবকিছু সরিয়ে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে,আমি - সেই মহার্ঘ্য সন্দেশ, ছোঁ'মেরে তুলে নিয়ে, মুখে পুড়ে দিলাম। 
মুখভর্তি সুস্বাদে আমি তখন অবিভূত। 
হুঁশ ফিরল, যখন সন্দেশ ভরা গালে মায়ের প্রচন্ড এক চড় এসে পড়লো। 

ঠাকুমার প্রভূত গালিগালাজ থেকে বুঝলাম--- নৈবেদ্য যতই আমার সাজানো হোক; সেই প্রসাদের সিংহভাগের অধিকারী বাড়ীর পুরুষ সদস্যরা। 
দু'গালে মায়ের পাঁচ আঙুলের দাগ নিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। অনেক রাতে মায়ের ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙলো। অভিমানে-রাগে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে রইলাম। কিন্তু,  আমার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে,  মায়ের অসহায়  কান্না, কোনোদিন ভুলতে পারি নি।
"মরার সময় ছেলের হাতের জল না পেলে স্বর্গবাস হয়না।"...... ঠাম্মার এই কথাটা বাবা মনে প্রানে বিশ্বাস করতো। ভাই ছিল আমার বাবার সেই স্বর্গবাসের ইনভেস্টমেন্ট। 
আমার ভাই, বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরের এক বহুজাতীক সংস্থায় কর্মরত এবং বিবাহিত। তার অবাঙালী পরিবারকে নিয়ে সেখানেই নিরাপদ জীবন যাপন করছে। এ শহরে খুব একটা আসার দরকার পড়েনা। এলেও অফিসের ভি.ই.পি গেস্টহাউজে থাকে। পূর্ব- দক্ষিণ খোলা বিশাল ফ্ল্যাটের অভ্যস্থ জীবন; এ'বাড়ীর স্যাঁতস্যাতে দেওয়ালে ওদের কষ্ট হয়। বাবা মারা গেছেন প্রায় দু'বছর হল। প্রভিডেন্ট ফান্ডের ষাট শতাংশ ছেলের ক্যারীয়ারে খরচ করেছেন। ইনভেস্টমেন্টের পুরোটাই যে জলে গেছে সেটা মৃত্যুর দিনেও বিশ্বাস করেতে পারেননি।
ঠাকুমার প্রায় চুরাশী চলছে। বৃদ্ধার আর ছেলের হাতের জল পাওয়া হলনা। আমার ছাত্র পড়ানো আর স্কুলে চাকরীর টাকায়, সংসারটা কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে। 
সেদিন সবে বাড়ীর দরজায় পা রেখেছি। মা ছুটে এল........
 "তাড়াতাড়ি আয়। সকাল থেকে কিচ্ছু খাচ্ছে না। বারবার তোকে খুঁজছে।"......
ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার মাথার কাছে বসলাম। 
মনে হল আমাকে দেখে, একটু যেন হাসলো। 
আমার হাতে ধরা দুধের গ্লাস থেকে দু'চুমুক মুখে দিয়েই, আবার ক্লান্তিতে মাথাটা বিছানায় এলিয়ে দিল। 
ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলো। আমি মুখটা নামিয়ে আনলাম মুখের কাছে। 
খুব আস্তে, প্রায় নিভে যাওয়া কন্ঠে ঠাম্মা বলল - "লক্ষ্মীছাড়ী বিয়ে কোরিস; তোর মেয়ে হতে ইচ্ছা হয়। 
বুড়িটাকে ক্ষমা করে দিস।"
Girl With Mom travelling- Valobasa
মা আর আমি সেদিন সারারাত জেগে বসে রইলাম। 
সারারাত ঠাম্মার বন্ধচোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল মুছলাম।
এত দিন পরে বৃদ্ধার কাছে আমার 'অলক্ষ্মী' জন্ম সার্থক হয়েছে।

# জানিনা কার লেখা, তবে Aparna Chakraborty নামের কেউ হতে পারে। 

বেশ্যার ছেলে কি স্কুলে যাই

আজ একটু অন্য ধারার লেখা।
তবে..., না কিছুনা, আসুন সুরু করি।
Baby With Mother - India - Valobasa
কিরে মাগী তুই নাকি আবার ছেলে টাকে মডার্ণ স্কুলে ভর্তি করেছিস? 
হাঁ বাবু ছেলে টা পড়াশোনায় খুব ভালো! 
ওই যে অপু মাস্টর আসতো আমাদের বস্তিতে পড়াতে ঔ তো বলতো মালতী তোর ছেলেটার মাথা আছে রে,ওকে ভালো করে পড়াস! 
তাই ভর্তি করলাম বাবু! 
একরাশ গর্ব যেনো মালতীর ঠোঁটে, আর না হবারই বা কি আছে ; বস্তির এই রকম শরীর বেঁচা কটা মায়ের ছেলে মর্ডান স্কুলে পড়ে? 
উফ শালা বেশ্যা মাগী তোর ছেলে শালা মর্ডান স্কুলে পড়বে ? 
শালি কোনো পার্থক্য রাখবি না নাকি ভদ্রলোকেদের সাথে, তুই জানিস শালা আমার ছেলে টাও ওই স্কুলে পড়ে একপ্রকার মারতে মারতে বলে দেবীবাবু ! 
শালী ডাক তোর ছেলেকে বলছি শালা বেশ্যার ছেলে হয়ে এতো শখ কিসের ওর, ডাক শালী তোর ছেলেকে !
মালতী দেববাবুর পায়ে ধরে কোনো রকম বোঝাতে সম্মত হয় যে যেনো ওর ছেলেকে দেবীবাবু ওর বেপারে কিছু না বলে, নাহলে ওর ছেলে যে আর সভ্য জগতে মিশতে পারবে না, তাহলে ওর পড়াশোনায় ক্ষতি হবে !! 
যাইহোক সেদিন হয়তো সামলানো গেলো দেবীবাবুকে এই মর্মে যে আজ তাকে বিনি পয়সায় শরীর দিতে হবে ! 
বেশ্যা তো ! দিতে রাজি হয়ে গেলো মালতী ! 
এখন মালতী নিজের ছেলের দিকে ঠিক ঠাক তাকাতেও পারেনা লজ্জাই ! 
ছেলে ভদ্র লোকের স্কুলে পড়ে যে আর সে তো বেশ্যা, কোথাও যেনো ভেতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো মালতীকে ! 
ভয় ছিলো যদি ছেলে ভদ্র হয়ে বেশ্যা মাকে ছেড়ে দেই, এই সব চিন্তা ভয় আর মর্ডান স্কুলের খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে গেছে মালতী ! 
Indian Baby With Mom -Valobasa

এভাবেই চলতে থাকে মালতীর সংসার ! 
তবে এই বেশ্যা টাকেও হয়তো সাথ দিয়েছিলো ভগবান, তার ছেলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে যে !
আজ মালতী তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে আজ ও ধান্দা করেনি, কাওকে ছুঁতেও দেইনি! 
ছেলে বাড়ি ফিরতেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা আমাদের স্কুলে কাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, তোমাকে নেমন্তন্ন করেছে, এই দেখো কার্ড ! 
তুমি যাবেনা মা ? 
নারে তোদের মস্ত স্কুল, সব বড় বড় লোক জন আমি গরীব মানুষ গিয়ে কি করবো বল?
না মা তোমাকে কাল যেতেই হবে, নাহলে আমিও যাবোন ! 
কোনো রকম জোর পূর্বক মালতী যেতে রাজি ! 
পরদিন ভোর ভোর উঠে মালতী খুঁজে রেখেছে মালতীর বরের দেওয়া প্রথম উপহারের তাঁতের শাড়ী টা, খুব আনন্দ তার আজ যে আবার সে ভদ্র লোকেদের সাথে মিশবে কিছুক্ষনের জন্য, স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রথম !
যাইহোক মর্ডান স্কুলে ছেলের সাথে মালতী, অপূর্ব অনুভূতি হচ্ছে তার,কতো লোক, ভদ্র লোক, কতো বড় বড় বেপার, কিন্তু সেই ভয় টা পিছু ছাড়েনি "ছেলে যদি বুঝে যায় আমি বেশ্যা" !
অনুষ্ঠান হলে ঢুকতেই মালতী দেখে সামনের সিটে বসে দেবীবাবু ! 
মালতী লজ্জায়, ভয়ে পিছনে গিয়ে এক সিটে মাথা নামিয়ে বসে পড়ে, পাছে দেবীবাবু যেনো দেখে না নেই, দেখলেই আজ হয়তো সব জেনে যাবে সবাই, ছেলের কাছে মালতীও আজ বেশ্যার পরিচয় পাবে হয়তো !
অনুষ্ঠান তখন শুরু হয়ে গেছে, এবার মালতীর ছেলেকে স্টেজে ডাকলো পুরস্কার নেওয়ার জন্য কিন্তু মালতীর চোখ নীচে, মুখ নীচে সে দেখবে না কারণ যদি দেবীবাবু দেখে ফেলে !
স্টেজে মালতীর ছেলে, পুরস্কার নেওয়ার পর কিছু বলার জন্য অনুরধ করলো প্রিন্সিপল মেম ! 
Mom And Son - Valobasa

"আমি দেহব্যাবসায়ির ছেলে " হাঁ মেডাম আমি গর্বিত,আমি ওনার ছেলে " গোটা ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেলো মালতীর ছেলের কথায়!
ওই দেখো সবাই আমার মা!!!
শেষ সিটে মাথা লুকিয়ে বসে আছে। 
মাথা তোলো মা, সবাই আজ দেখুক তোমায় তুমি আমার মা, আমি গর্বিত মা তোমার জন্য !
সেদিন যখন দেবীবাবু তোমাকে অপমান করেছিলো সেদিন আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনেছি, সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মা তোমার মাথা উঁচু করবো , এটাই তোমার উপহার মা !
আজ আমি প্রথম হয়েছি এটা সাধারণ কিন্তু এক দেহব্যাবসায়ির ছেলে প্রথম এটাই অসাধরণ কিছু মা ! মালতীর চোখে আনন্দ অশ্রু, সেও আজ গর্বিত, এখন তার লজ্জা নেই, নেই ভয় !
সমগ্র ঘর শুনে যাচ্ছিলো সেদিন এক বেশ্যার ছেলের চিত্কার !!!

মায়ের তুলনা হয়না

একমাত্র মায়ের ভালোবাসা স্বার্থহীন।
বাকি সবেতেই স্বার্থ।
 তাই ভালোবাসার কথা আসলেই মায়ের কথা বলতেই হয়।
Indian Mother With Son Love - Valobasa
যে মেয়েটার বিছানায় গড়াগড়ি করে কিংবা হাত পা ছুঁড়ে ঘুমানোর অভ্যাস এক সময় সেই মেয়ে এক কাত হয়ে সারারাত পার করে দেয় কারণ সে জানে তার পাশে শুয়ে আছে ছোট্ট একটা বাবু। 
এখন কিছুতেই হাত-পা ছোড়া চলবে না।
যে একটা সময় লাল পিঁপড়ার কামড় খেয়ে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলত, আজ তার ভেতরে বেড়ে উঠা ছোট্ট প্রাণটা
সারাদিন হাত পা ছোড়াছোড়ি করে, প্রতিটা লাথি বেশ জোরেই আঘাত করে তবু মা দাঁতে ঠোট চেপে সব সহ্য করে, হয়ত দু ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ে।
সে জল যতটা কষ্টের তার থেকে অনেক বেশি আনন্দের কারণ সে অনুভব করে তার বাবুটার জীবন্ত প্রাণের স্পন্দন।
একদিন নাড়াচাড়া না করলে অজানা আশংকায় বুক কেঁপে ওঠে "সবকিছু ঠিক আছে তো??"
একদিন হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণা।
জানান দেয় তার সন্তানের পৃথিবীতে আগমন এর সময় হয়েছে। 
বোধ হয় পেটের ভিতরে কেউ কিছু টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। 
কুড়িটি হাড় একসাথে ভেঙে দেওয়ার সমান কষ্ট নারীজাতি সেদিনই অনুভব করতে পারে। 
এত কষ্টের পর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মায়ের ক্লান্ত বিধ্বস্ত চেহারা খানি এদিক ওদিক খোঁজে ফেরে একজনকে, মৃদু করে বলে "আমার বাবু কোথায় ?"
ছোট্ট একটা রক্ত মাখা শরীর তুলে দেওয়া হয় তার কোলে। 
টপটপ করে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে সে দেহে।
তার বুকে মাথা রেখে মা বাবুটার হৃদস্পন্দন শোনে। 
আচ্ছা এটা কেন বলে না "তুই আমায় খুব দিয়েছিস। তোকে আমার লাগবে না।
"মা জানে তার এই ছোট্ট বাবুটা ছাড়া তার একদম চলবে না। 
বাবুটা মায়ের বুকের উষ্ণতায় চুপটি শুয়ে থাকে মায়ের নির্ঘুম চোখ তাকে সারারাত পাহারা দেয়। 
ফিসফিস করে বাবুটাকে শোনায় "তুই ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকব।
"তুমি কি করে পার মা?
তবুও কেন আমরা তোমার মর্যাদা দিতে পারি না..??
কেন শেষ বয়সে তোমার ঠিকানা হয় ওই বৃদ্ধাশ্রম!

বৌমা আমাদের কিন্তু ছেলে চাই

ছেলে-ছেলে করতে করতে এখন বিয়ে করতে গেলে আগে চাকরি দেখবে তারপর ছেলে।
আসলে বিয়ের বাজারে মেয়েদের এখন বেশ দাম।
কিন্তু তবুও বেশিরভাগ লোক এখনও ছেলেই চাই।

- মা কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?
- কিছু না রে সোনা। বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে মা।
- ওরা কেউ আমাকে চায় না, না?
- নাঃ রে। ওরা মেয়ে চায় না।
- মা তুমি ওদের বলো না আমি ওদের খুব ভালোবাসবো, বড় হয়ে ওদের খুব আদর যত্ন করবো, ওনারা যা বলবেন শুনবো, কোনো কষ্ট দেবো না। তাহলেও ওরা আমায় আনবে না?
- ও মা কি হল? আরে ও মা কেঁদো না। আমার জন্য কত কষ্ট তোমার। দুদিন আগেও দেখো সব ঠিক ছিল। তুমি, আমি, বাবা একসাথে ছিলাম। বাবা কত্ত আদর করতো আমায়। এখন তো আমার জন্য তোমাকেও আদর করে না। আমার খুব খারাপ লাগছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। মা আজ ডাক্তার যে ওষুধটা দিয়েছে খেয়ে নাও। কেঁদো না তুমি।
- কান্নাভেজা মায়ের কন্ঠস্বর বলে উঠলো জানিস তুই কিসের ওষুধ ওটা? ওটা আস্তে আস্তে তোর ছোট্ট শরীরটা গলিয়ে দেবে আর কাল সকালেই তুই আমার থেকে আলাদা হয়ে যাবি। তোর ছোট্ট হাত পা গুলো, ছোট্ট হার্টটা সব গলে জল হয়ে যাবে।
- হয়ে যাক মা। কোন কষ্ট হবে না আমার। সব সহ্য করে নেব আমি। তবে তোমাকেও কথা দিতে হবে কিন্তু তুমি তোমার ছেলের থেকে আমাকেই বেশি ভালোবাসবে। আমিই কিন্তু তোমার সবচেয়ে প্রিয়। আমিই তো তোমার প্রথম বলো। 
এই বলে স্বরুপা দেবী থামলেন একটু। কান্নায় গলা বুজে আসছে। এক টানা কথা বলতে গেলেই হাঁফ ধরেযায় আজকাল। প্রীতি তাঁর বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে আছে ছলছল চোখে। আগলে নিলেন নিজের কাছে।
বড্ড ভালো মেয়েটা। পাঞ্জাবী পরিবারের মেয়ে অথচ কত সুন্দর মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিল সংসারে। সুমন এর চোখে মুখেও খুশি ঝিলিক দিত। সুমন যেদিন প্রথম বাড়িতে বলেছিল সুমনের বাবা, ঠাকুমা, পিসিমনি সবাই নাক কুঁচকে ছিল। কিন্তু জেদ ছাড়েনি ও। ওই মেয়েই আসবে। সুমনের ভালোবাসার থেকেও হয়তো জেদের জোর অনেক বেশি ছিল।  তাই পরের অগ্রহায়নেই চন্ডীগড়ের ভট্টল পরিবারকে কলকাতায় উড়িয়ে এনে চার হাত এক করেছিলেন। 
কপালের দোষ। বিয়ের দুবছরের মধ্যেই সুমন হার্টের অসুখে গত হল। 
মা বাবা মেয়েকে নিয়ে যেতে এলেও পাগল মেয়েটা গেলনা। 
চোখের জলে ভিজে থাকা একটা মুখ আর কত সহ্য করা যায়। জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাপের বাড়ি। নিজের লোকেদের কাছে আনন্দে থাকুক। তাতেও শান্তি নেই। মেয়ের রোজ ফোন করা চাই।
পুজোতেও আসে। এক মাস বুড়ো বুড়ির সাথে কাটায়। এবছরও এসেছে। 
ওর মা বাবা নিয়ে যাবে ওকে কাল। ওরা চায় আবার বিয়ে দিতে। 
সুমনের বাবাকে বলেছিল সেদিন। কানে এসেছিল দু একটা কথা।
মনটা তারপর থেকেই বড্ড হুহু করছে। তাহলে এটাই কি শেষ আসা! 
আজও দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কিছুক্ষণ ওঘরে শ্বশুরের সাথে টিভি দেখতে দেখতে ইষ্টবেঙ্গলের হয়ে গলা ফাটাল তারপরই এসে জড়িয়ে পাশে শুলো। 
একথা সেকথা হতে হতে হঠাৎ ই মনের কোণায় জমে থাকা একটা কষ্ট বাইরে এনে ফেলেছিলেন।
আজ রাতটাই শেষ। কাল বিকেলের ট্রেন। 
মা বাবাও যেভাবে বিয়ের জন্য জোর করছে কে জানে এটাই শেষ আসা কিনা। রাতে শুয়ে শুয়ে প্রীতির 
চোখে কত দৃশ্য ভেসে উঠছে।
লাল লেহেঙ্গা, টোপর পরা সুমনের ক্যাবলা হাসি, মালা বদল, প্রথম ইলিশ মাছ রান্না, আলতা পরা, পায়েস বানানো, শাড়ী পরা আর সব কিছুর সাথে একটা স্নেহমাখা ভালোবাসা। 
দুপুরবেলায় শোনা কথাগুলো আর মা এর সেই কান্না তোলপাড় করে দিচ্ছে মনটাকে।
আস্তে আস্তে ফোনটা হাতে তুলে নিল। 
অপরপ্রান্তের অনেক অনুরোধ উপরোধেও এপ্রান্ত একটুও নরম হলনা। 
ফোনটা ছাড়ার পরই আশ্বস্ত হল বরং।
এখনও কানে ভাসছে একজন মা আর তার ছোট্ট মেয়ের কথাগুলো।
এজন্মে তো তোমার আদর পেলামনা পরের জন্মে আবার আসব। তখনও ফিরিয়ে দেবে না তো?
না রে মা। পরের জন্ম তো অনেক দেরী। এজন্মেই তো তোকে চাই।
যে ছেলের জন্য আজ তোকে যেতে হচ্ছে, রাজরানীর মত সেই ছেলের হাত ধরেই ফিরিস।
ধীর পায়ে স্বরূপাদেবীর কাছে গিয়ে আবারও বুকে মাথা রাখলো প্রীতি।
আর কোত্থাও যাবো না মা। এবার আর কেউ আমার মন গলাতে পারবে না।

উফফ! প্রেম কি অসম্ভব বেদনাদায়ক

একটা খবর হয়ত আপনার চোখে পড়েছে,
দুজন প্রেমিক প্রেমিকা পারিবারিক কোনও সমস্যার কারনে একসাথে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
খবরটা আমিও বিস্তারিতভাবে পড়িনি, জাস্ট হেডলাইনটুকু।
তবে এটা সত্যিই যে প্রেম করলে এমন অবস্থার মধ্যে পড়তেই হয়, মাঝে মাঝে মনে আসবেই এমন কথা।
আমারও এমন অবস্থা, তবে এখনও যে চলে যাইনি সেটা তো বুঝতেই পাছেন।

তো আজ আপনাদের এমনই একটা মর্মস্পর্শী গল্প আপনাকে শোনাব। চলুন শুরু করা যাক।

সুমি এখন নবম শ্রেণীতে পড়ে। 
প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ১টা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে সে লক্ষ করে। ছেলেটির নাম সুমন।
সুমন প্রায় ১ বছর ধরে ভালবাসে সুমিকে, কিন্তু বলতে পারে না। 
কারণ সুমি খুব ধনী পরিবারের মেয়ে। আর সুমন গরিবের ছেলে।
আজ ১৪ ফ্রেব্রয়ারি। 
সুমন সাহস করে বললো,
"আমি তোমাকে ভালবাসি সুমি। যদিও আমি জানি তুমি আমায় ভালবাসতে পারবেন না।" কথাগুলো বলে সুমন চলে গেল।
এইভাবে একটা বছর চলে গেল। 
এখন দশম শ্রেণীতে সুমি। সে লক্ষ করে আজও সুমন তার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করে। 
সুমি আস্তে আস্তে সুমনের প্রেমে পড়ে যায়।
তাই একদিন সুমি বলেও দিলো তার মনের কথা।
দুজনের প্রেম চলতে লাগল ১ বছর। 
এই ১ বছরের মাঝে দু'জন কখনো একাকি দেখা করেনি, কেউ কারো হাত ধরে রাস্তাতেও চলেনি।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সুমির বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
কিন্তু সুমি বিয়েতে রাজি না। কারণ সুমি সুমনকে ছাড়া আর কেউকে নিজের স্বামি হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না। 
সুমি ফোন করল সুমনকে...
-হ্যালো সুমন।
-হ্যা বলো।
-তুমি আজ রাতে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে?
-কেন? হঠাৎ করে কি হল?
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এই বলে সুমি কান্না করে ফেলল।
-কান্না করোনা সুমি, আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
ওরা ঠিক তাই করলো। সকালে দুজন বিয়ে করে সুমনদের বাড়ি চলে আসলো। 
সুমনের পরিবার থেকে কোন সমস্যা নেই কিন্তু এদিকে সুমির পরিবার সব জেনে গিয়ে সুমনের নামে ও তার পরিবারের নামে পুলিশে কমপ্লেন করলো।
তবে সুমির বক্ত্যব্যের কারণে কোন কিছু হলো না সুমন ও তার পরিবারের। 
সুমির বাবা সুমিকে উদ্দেশ্যে করে বলল, "আজ থেকে আমার কোনো মেয়ে নেই।"
সুমির নামে ব্যাংকে বেশ কিছু টাকা ও জমি ছিল, তা সব তার বাবার নামে করে দিল।
সুমন সুমিকে বলল যে, সুমির বাবার টাকার প্রতি তার কোন লোভ নেই। 

ভালো যাচ্ছিলো তাদের জীবন।
সংসার ৭ মাস। সুমি গর্ভবতী, তার পেটে ৩ মাসের বাচ্চা। 
একদিন সুমির কাকা এসে বলল, "সুমন, সুমির মা খুব অসুস্থ সুমিকে দেখতে চাইছে, আমি দু'দিন পর ওকে দিয়ে যাব।"
সুমি বলল, "আমি সুমন কে ছাড়া যাব না।"
সুমন বলল, "যাও না, দুদিন পরই তো চলে আসবে।"
অনেক বোঝানোর পর রাজি হয় সুমি। 
সুমি অনেকক্ষণ ধরে সুমনকে জরিয়ে ধরে। 
সুমন সুমির কপালে চুমু দিয়ে বলে, "পাগলী বউ আমার।"
তারপর সুমির বাপের বাড়ি এসে যা হলো তা কল্পনা করা যায় না!
সুমির বাবা সুমিকে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞান করে তার বাচ্চা নষ্ট করে দেয়।
তাকে দিয়ে জোর করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করানো হয়।
ডাক্তার তার মা-বাবাকে বলে যে তাকে রেস্টে রাখতে।
আজ দুদিন সুমি কারো সাথে কথা বলে না, শুধু একা একা কাঁদে। 
সুমির দাদা - বাবা কেউ বাড়ি নেই। সুমির মা একটু পাশের বাড়ি গেছে। 
সুমি বাড়িতে একা নিজের ঘরের দরজা দিয়ে হাত কেটে রক্ত দিয়ে লিখলো, "এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে একজন আছে সে আমার সুমন। মা তুমি একটা মেয়ে হয়ে আমার স্বামীর ঘর ছাড়া করলে! তুমি এক মা হয়ে আমাকে মা হওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারলে?"
এতটুকু লিখেই সুমি আত্মহত্যা করে।

বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কীয় একটি মর্মস্পর্শী গল্প


পুরো একটা বছর হয়ে গেল MH370 বিমানের কোনও খোঁজ মিলল না।
আস্তে আস্তে স্মৃতির আড়ালে চলে যাচ্ছে মাঝ আকাশে হারিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বেজিংগামী যাত্রীবিমান MH370।
উদ্ধারকারী দল আশা ছেড়ে দিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সরকারও প্রায় ধরেই নিয়েছে আর কোনও দিন পাওয়া যাবে না।
কিন্তু সবাই ভুলে যেতে বসলেও ভোলেনি MH370 বিমানের যাত্রী আর বিমানকর্মীদের পরিবারের লোকেরা।
এক বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিমানের এক যাত্রীর ১০ বছরের ছেলে চিঠি লিখেছে তার বাবাকে।
সেই চিঠিটাই এই পোস্টে লিখলাম।
প্রিয় বাবা,
বাবা পুরো একটা বছর  কেটে গেল তবু তুমি এলে না।
তবে জানো তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি একটুও ক্লান্ত হয়নি। কেন জানো! আসলে আমার বন্ধুদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।
ওরা ওদের বাড়ির লোকের কাছে শুনে আমায় বলেছে, তুমি নাকি আর কোনও দিন ফিরবে না কারণ নাকি তোমার খোঁজ আর কোনও দিন পাওয়া যাবে না।
ওদের কথা শুনে আমার হাসিই পেয়ে গিয়েছিল। আমি জানি তুমি ফিরবে, ফিরবে, ফিরবে।
তুমি যে প্লেনে ছিলে সেই MH370-টা কোথাও না কোথাও নিশ্চই আছে।
তুমি আমায় একটা গল্প বলেছিলে মনে আছে! গল্পের শেষে বলেছিলে, তুমিও ওই গল্পের নায়কের  মত একটা দেশ খুঁজে বের করবে। জানি ওমন একটা দেশ খুঁজতেই তুমি গিয়েছ।
তোমার সেদিন হয়তো প্লেনেই সবাই ঠিক করলে এমন একটা দেশ খুঁজবে যেখানে কোনও বাজে লোক থাকে না, যেখানে কালো সাদা লোকেদের আলাদা করে দেওয়া হয় না, যেখানে গরীব-বড়লোকে বলে কিছু নেই। সেই রকমই কোনও দেশ হয়তো তোমরা পেয়ে গিয়েছো।
জানো ক'দিন আগেই আমাদের স্কুলের সেই অডিটিরিয়ামে একটা অনুষ্ঠান হল তোমাকে আর প্লেনটাকে নিয়ে (অবশ্য এরকম অনুষ্ঠানে এই এক বছর অনেক হয়েছে, আমায় অবশ্য ওগুলোতে মা যেতে দেয়নি)।
অনেক লোকে তোমায় আর প্লেনটাকে নিয়ে অনেক কথা বলল।
সবটা আমি বুঝতে পারিনি, তবে যেটুকু বুঝলাম সেটাতে পরিষ্কার, ওরা শুধু বিজ্ঞান আর বই পড়া জিনিসগুলোই বোঝে।
কিন্তু নিখোঁজ কোনও কিছুর জিনিস যদি বই পড়ে বলে দেওয়া যেত তাহলে তো বারমুডা ট্র্যাইঙ্গেল, গড এসব কিছুই থাকত না।
অনুষ্ঠানের শেষে মাকে একটা মূর্তি দেওয়া হল, মা কাপড় দিয়ে চোখটা মুছে ছিল। মাকে কিছু বলতে খুব জোর করল ওরা। মা কিছু বলতে পারল না।
আমায় দেখে সবাই মুখ দিয়ে এমন একটা আওয়াজ করতে লাগল যেন আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
মাইকটা আমার সামনে দিলে আমি বলতাম, প্লেনটা হারিয়ে যায়নি, খুঁজতে গেছে।
খুঁজতে গেছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, আর  আন্তরিকতাকে। এ কথাটা কেন মনে হল জানো?
তুমি চলে যাওয়ার পর টিভিতে যতবার তোমার আর হারিয়ে যাওয়া প্লেনটার কথা দেখিয়েছে ততবার বাড়ির ফোনটা বেজেছে, কলিংবেলে আওয়াজ হয়েছে।
সবাই এসে মাথায় হাতও বুলিয়েছে।
কিন্তু তুমি শিখিয়েছিলে না, আসল ভালবাসা আর মেকি ভালবাসার ফারাক কীভাবে ধরা যায় সেই পদ্ধতিটা।
তাতে করে বুঝে গেছি ওরা  ঠিক ভালবাসে না। তুমি থাকলে তুমিও এমনটাই ভাবতে....
দেখো তোমায় আর একটা কথা বলতে ভুলে গেলাম তুমি চলে যাওয়ার পর মা ক টা দিন কিচ্ছু খায়নি।
টিভিতে, কাগজে, ম্যাগাজিনে কটা দিন শুধু তোমার আর ওই MH370 প্লেনটার কথা।
তারপর আস্তে আস্তে সবাই ভুলে গেল। মা একটা চাকরি পেল।
মাঝে আরও একটা প্লেন হারিয়ে গেছিল, পরে পাওয়া গেল ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবস্থায়।
তখন আবার আমাদের বাড়ির সামনে কদিন ক্যামেরার ভিড় ছিল, তোমার কথা হচ্ছিল, মা ইন্টারভিউও দিল।
তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এবার আসবে। কিন্তু না...
ওই প্লেনের খোঁজ পাওয়ার পর মা-ও বলতে শুরু করল তোমাদের প্লেনটাও হয়তো কোথাও ভেঙে পড়েছে।
আমি মায়ের সঙ্গে তর্ক করেছিলাম। মা তখন চুপ করেছিল।
কদিন আগে টিভিতে বলেছিল, তোমাদের প্লেনের ব্যাটারি না কী যেন একটা পাওয়া গিয়েছে।
এখন আমার ওসব ভাল লাগে না, বিশ্বাসও হয় না।
প্রথম প্রথম যখন কোনও একটা মহাসাগরে তোমাদের প্লেনের খোঁজ চলছিল তখন একদিন শুনছিলাম এই পাওয়া যাবে, এই ব্ল্যাক বক্স সাড়া দিয়েছে...ও মা তারপর দেখলাম ওসব কিচ্ছু না।
সবাই আস্তে আস্তে ভুলে গেল।
জানি সবাই ভুলে যাবে, শুধু আমি ভুলব না।

স্কুলে একটা রচনা লিখতে দিয়েছিল তুমি কী হতে চাও এটা নিয়ে। আমি লিখেছিলাম পাইলট হতে চাই।
কেন জানো!
তোমায় প্লেনে করে খুঁজতে যাবো তাই। এখন খুব মন দিয়ে পড়ছি। পাইলট হতেই হবে।
আমি এখন আর কাগজের প্লেন বানাই না। এখন ওসব খেলা আর ভাল লাগে না। তোমায় একটা মিথ্যা কথা বলেছি।
চিঠির শুরুতে বলেছিলাম না, বন্ধুরা তুমি আসবে না বললে আমার হাসি পায়, ওটা মিথ্যে কথা।
আসলে আমার কান্না পায়। স্কুলের স্যার বলেছিল, ওত বড় একটা প্লেন কখনও এতদিন নিখোঁজ থাকতে পারে না।
টিভিতে র‌্যাডার না কি বলে একটা জিনিসের কথা বলে বুঝিয়ে বলেছিল কেউ তোমাদের প্লেনটা বন্দুক দিয়ে নামিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।
সব কথা শুনে আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। মনের জোরটা কমে আসছে বোধহয়।
সব কেমন যেন গুলিয়ে আসছে। আগে দেখতাম তুমি প্লেনটা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে একটা এইয়া বড় সাগরের সামনে স্নান করতে নামছো।
এখন আর ওটা দেখতে পাই না। এখন ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে মাঝে মাঝে শুনতে পাই আসবে না, ধ্বংস হয়ে গেছে, সবাই মারা গেছে।
বাবা তুমি ফিরে এসো, এসো প্লিজ। আসার সময় কিচ্ছু আনতে হবে না।
ঠিকানা জানি না তাই লেখাটা নৌকা বানিয়ে জলে ছেড়ে দিলাম।
আমি জানি লেখাটা ভেসে ভেসে তোমার কাছে যাবে।
তুমি পড়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ো। আর হ্যাঁ মাকে বলো না আমি তোমায় চিঠি লিখেছি, তাহলে খুব রেগে যাবে।
মা বলে বাবার কথা সব সময় ভাববে না।
ইতি- প্রিন্স

আশা করি সবার ভালো লেগেছে।
আমাদের সাথে থাকুন এবং প্রতিনিয়ত ভালোবাসা ডট ইন ভিজিট করুন।
(লেখাটি ২৪ ঘন্টা সংবাদ পত্র থেকে নেওয়া হয়েছে)