মা মেয়ের মজার গল্প

 রোজ রাতেই আমি টের পাই আমার  বড় মেয়ে রাতে পুনুর পুনুর করে ফোনে কথা বলে।আমি ওর রুমে গেলেই একেবারে চুপ হয়ে ঘুমের ভান ধরে ব্যাঙ্গের মতন পরে থাকে। আমি ওর মা আমিও এমন করে ওর বাপের সাথে প্রেম করতাম।তখন ফোন ছিলনা,রাতে চিঠি আদান প্রদান করতাম। বাবাকে দেখলে আমিও ব্যাং মরার মতন পরে থাকতাম।

ভাবলাম আমার কিছু একটা করতে হবে।আমার বাবা কলেজ যাওয়া অফ করে দিয়েছিল তাই আমি পালিয়ে এসেছিলাম।কিন্তু আমি ডিজিটাল মা,আমার এসব করা চলবেনা।

টেকনিক করে, মেয়ে যখন ওয়াশ রুমে গেল আর ওর ফোনখানা নিয়ে দেখি রিসিভ কল ভর্তি হয়ে আছে একটি নম্বর।আর তা জান নামে সেভ করা।সুন্দরভাবে ওই নম্বর টুকে নিলাম।

ব্যাস!রান্না ঘরে গিয়ে ওই নম্বরে মেসেজ করলাম ,জান আমি রিংকি এটা আমার নিউ নম্বর।আগের নম্বরে ভুলেও কল দেবেনা।ওটা মায়ের কাছে।ওই নম্বর ব্লক লিস্ট এ দেও।এখন থেকে মেসেজিং করবো। মা টের পেয়েছে সব।তাই কিছুদিন কথা বলা যাবেনা।

ওপাশ থেকে টুং করে ফিরতি মেসেজ,আচ্ছা জান।কি করছো সোনা?

মনে মনে ভাবি,তরে একবার হাতের নাগালে পাই সোনা পুড়ে তামা বানাব।

আমি মেসেজ দিলাম,কিছুনা জান।মন খারাপ।

এভাবেই আমাদের মেসেজিং চলতেই রইল,চলতেই রইল,৫দিনের মাথায় আমি ভোর রাতেও বারান্দায় গিয়ে মেসেজিং করি।আমার বর মহাশয় ইদানীং আমার দিকে কেমন সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকায়।তাতে কিছুই আসে যায়না। আমার মেয়ের লাইফ আগে।আমি অনেকদিন মেসেজিং করলে আমার মেয়ে ওদিক থেকে ওই ছেলেকে ভুলে যাবে।

ইদানীং আমার মেয়েকেও মন মরা দেখি।নম্বর ব্লক লিস্ট এ দিয়েছে কিনা।

যাক, অবশেষে আমি ভাবলাম আমি সেই ছেলের সাথে দেখা করি।ওকে গিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসবো।তাহলেই সাকসেস।

সাজুগুজু করছি,মন বেশ ফুরফুরা লাগছে আজ সেই বেয়াদপ কে চরম ধোলাই দিব।

আমার বর মশাই পেপার পড়া বাদ দিয়ে আমায় আড়চোখে দেখছে আর জিজ্ঞেস করছে কি!কোথায় যাও?

ওকে বললে ও ব্যাপার টা নিয়ে হাইপার হবে।তাই বললাম বাজারে কিছু কেনার আছে

-এই বিকেলবেলা?

তো?মধু নেই ঘরে।তুমি তো জানো সকালে খালি পেটে আমি মধু খাই।ডায়েটে আছি তো।

বাড়ি  থেকে বেরিয়ে পার্ক এ গিয়ে দাড়িয়ে আছি।

অল্প বয়সী কাউকেই দেখছিনা।কিন্তু আমার বরের চেয়েও বয়স্ক লোক আমার পাশে ঘুরঘুর করছে।

ফোনটা হাতে নিয়ে আবার মেসেজ করলাম  কই তুমি?

ওপাশ থেকে মেসেজ না দিয়েই কল দিল।আমি রিসিভ করে চুপ করে আছি।কি অদ্ভুত আমার পাশে দাড়ানো লোকটির কানেও ফোন আর আমার দিকে শকুনের মতন তাকিয়ে আছে।আমি কেটে দিয়ে আবার কল দিলাম,আমি আরো শিহরিত হলাম,ফোন বাজছে ওই লোকের হাতের টা ই।

রেগে গিয়ে বললাম,আপনি ই সেই মানুষ! ছিঃ মেয়ের বয়সী একজন এর সাথে প্রেম করতে লজ্জা লাগেনা।আবার তাকে জান সোনা বলে ডাকেন!

লোকটি তীব্র দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,বেসরম মহিলা,তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকছে আর এখন বাচ্চার বয়সী ছেলেকে বিরক্ত করেন!

ঝগড়ার এক পর্যায় জানতে পারলাম,আমার মেয়ে এই লোকের ছেলের সাথে প্রেম করে।তিনি তার ছেলের ফোন নিয়ে নিয়েছিলেন ।আর আমি এতদিন তার ছেলে ভেবে তার সাথেই প্রেমালাপ করেছিলাম।

দুজন ই এক পর্যায় হাসতে হাসতে মরার উপক্রম হয়েছে।দুই ব্যর্থ গোয়েন্দাই এক পর্যায় কফি শপ এ বসলাম।নিজের কর্মকান্ডর জন্য স্যরিও বললাম।তিনিও বললেন।ভাবলাম বেয়াই হিসেবে ছেলের বাবা মন্দ না।হেসে হেসে বললাম ছেলের ফোনটা বাসায় গিয়ে ছেলেকে দিয়ে দেবেন,আমার মেয়ে খুব ই মন মরা হয়ে আছে।

সে উঠে বললো,হুম আগে মেসেজিং গুলি মুছে নেই।এমন প্রেমালাপ দেখলে মামলা খেয়ে যাব হা হা হা।

আমি হেসে কুটিকুটি হয়ে কফির মগে চুমুর দিব তখন ই দেখছি আমার দিকে রাক্ষসের মতন তাকিয়ে আছে রিঙ্কির বাবা।

এ কি তুমি এখানে?

-বাহ!! না আসলে তো এমন রঙ্গ দেখতেই পেতাম না

এই কি বলো?ভুল ভাবছো তুমি আমায়।

-ভুল!ছিঃ এত নিচ তুমি?এখন তো আমি তেতো হয়ে গেছি?আর এই বেটা মধু?তাই তো ভ্রমর মধু খেতে এসেছে।খাও মধু।

এই বলে রিঙ্কির  বাবা চলে গেল।

আমি পিছন পিছন ছুটছি।বেয়াই মশাই উঠে বললো,ঘাবড়াবেন না আমি আছি অলয়েজ পাশে।

রেগে বললাম,চুপ কর টাকলা ব্যাটা।মেয়ের প্রেম ভাঙাতে গিয়ে আমার সংসার ই ভাঙার উপক্রম হয়েছে।

ও রিঙ্কির বাবা দাঁড়াও..তুমি ভুল ভাবছো,দুনিয়ার সব মধুই ভেজাল,তুমি ই আসল। 

সংগৃহীত 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন