ছোট একটা সোনাগাছির করুন কাহিনী

 Valobasa.com Valobasa .com Valobasha.com Bhalobasa.com Bhalobasha.com www.valobasa.com www.bhalobasha.com

ওই দূরে ট্রেন যায়। 

পাশেই একটা ছোট রাস্তা নেমে গেছে। 

সেই রাস্তা দিয়ে মিনিট দুই গেলেই "আঙ্গুরবালার কোঠা", শহরের একমাত্র যৌণ পল্লী। 

পল্লী বলা ভুল, এই একটাই বাড়ি। 

তবে অবৈধ নয়, পারমিশন আছে আঙ্গুরবালার কাছে। 

আঙ্গুরবালা ওই কোঠার মালকিন, নাম শুনেই বোঝা যায়। 

ঊর্ধ্ব পঁয়ত্রিশ এর মহিলা। 

এককালের সুন্দরীর রূপে ঢল নামলেও সাহসে কেউ টেক্কা দিতে পারবেনা। একা হাতে সব সামলায়। কম ব্যপার না।

স্টেশন থেকে কাছে হওয়ায় খদ্দের কম হয়না, পাশেই মদের ঠেক আছে এটাও একটা উপরি পাওনা। 

তবে যত না উপরি লাভ তার থেকে বেশি সমস্যা এই ঠেকটাকে নিয়ে। টোন টিটকিরি তো যাইহোক ওদের গায়ে মাখলে চলে না, কিন্তু মাতাল হয়ে গালিগালাজ আর কোঠায় ঢুকে মেয়েদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি টা পছন্দ হয়না একদম। 

কদিন থেকে সেটা বেড়েছে। 

হ্যাঁ এই পুজোর মরশুম এ অত্যাচার টা বাড়ে। 

পুলিশে বলে দেখেছে, লাভ হয়না তেমন। দুটো হামবড়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওসি আবার একরাত ফ্রি তে চায়। মাদারচোত শালা। 

এটুকু ভেবে নিজেকে ফের শান্ত করলো আঙ্গুর। খুব ধৈর্য্য ধরে না থাকলে ব্যবসা চালাতেও তো পারবেনা। 

আজ কালীপুজোর রাত। 

একটু রাত না বাড়লে আজ খদ্দের হবেনা। 

তবে প্রস্তুতি টা নিতে তো হবেই। তাই সাজগোজ চলছে। 

আঙ্গুর সহ বাকি সবাই নিজের নিজের রুমে আয়নার সামনে ব্যস্ত। চোখের কাজল আর গালের লালি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে মনের অনিচ্ছা গুলো। যেনো চরিত্রের উপর টাকার একটা মোটা প্রলেপ।

"বড়মা..বড়মাআআআ.." হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকলো পলু। 

পলু এই বাড়ির একমাত্র ছেলে। বছর সাতেক বয়স। 

ওর মা এখানেই কাজ করতো, ডেলিভারির সময় মরে গেলো আর সেই থেকেই আঙ্গুর ওকে মানুষ করছে। 

"কি হলো পলু? এই তিনি সন্ধ্যেবেলা কোথায় গেছিলি?"

হাঁফানি থামিয়ে ঢোক গিলে পলু বললো, " তিন্নি দিদির সাথে"

চমকে উঠলো আঙ্গুর। 

মেয়েটা এই দু হপ্তা হলো এসেছে কোঠায়। 

ওর বাবা ওকে বিক্রি করে দিয়েছিলো। 

শেষমেশ এখানে ঠাঁই হয়েছে। 

আজ ওর মাসিক শুরু হয়েছে সকালে। 

কিন্তু কাউকে বলেনি ভয়ে। ব্যবসার রমরমা সময়ে ওসব হলে তো খুব লস। কাওকে তাই বলতে পারেনি ভয়ে। 

শেষে যখন জানা গেলো তখন বাকি মেয়েদের সে কি খিস্তাখিস্তি! 

সে তো ভালো যে আঙ্গুর ঠিক সময়ে গিয়ে এক থাপ্পড় মেরেছিল টুনি কে, "আমার কোঠার মেয়ে আমি বুঝবো, তুই নিজের খদ্দের সামলা। কদিন থেকেই তোর রিপোর্ট ভালো আসছেনা। কিছু বলিনি এদ্দিন কিন্তু এসব করলে তোর কপালে দুঃখু আছে বলে দিলাম।" এই বলে তিন্নি কে জড়িয়ে নিয়ে আঙ্গুর ওর হাতে দুটো নোট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, "সন্ধ্যেবেলা যাস ওই রোডের ধারে ওষুধের দোকানে কিনে আনিস।"

কোঠায় কেউ ওসব ব্যবহার করেনা। কাপড় দিয়েই চলে, কিন্তু তিন্নির মায়া ভরা মুখটা এমনই যে...

"তিন্নি দিদি কই?" পলু কে জিজ্ঞেস করলো আঙ্গুর। মুখে ওর চিন্তার ঘাম। 

"ওরা ধরে নিয়ে গেলো বড়মা।"

"কি বলছিস? কারা? কোথায় নিয়ে গেলো? বল।"

" হারু... ওই বেলতলার মাঠে..."

"হারু?!" বুক টা ধড়াস করে উঠলো আঙ্গুরের। হারু হলো পাড়ার পলিটিক্যাল গুন্ডা। এই সামনের ঠেকেই মদ খায় রোজ আর খিস্তি আউড়ায়। খুন, রাহাজানি কি নেই ওর নামে! ওর পাল্লায় পড়লে তো...

দুশ্চিন্তায় কেঁপে উঠলো আঙ্গুর। দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে হাঁক পাড়লো, "টুনি.... আমি বেরোলাম। তুই দরজা বন্ধ করে রাখ আমি না এলে খুলবিনা।

"কিন্তু বড়মা খদ্দের..."

"যা বললাম কর আর পুলিশে ফোন করে বল বেলতলায় মাঠে যেতে। খুব বিপদ।"

দরজা টা দড়াম করে লাগিয়ে ছুট দিলো আঙ্গুর। 

পিছন পিছন ছুটছে পলু। 

বেলতলায় যখন পৌঁছালো তখন সেখানে লোক জড়ো হয়ে গেছে। ভিড় ঠেলে ঢুকতেই দেখলো মাঠের পাশে পড়ে আছে ফুটফুটে মেয়েটার শরীর, রক্তে ভেসে যাচ্ছে শাড়ি, আর চোখ বেয়ে গড়িয়ে আসছে নিথর জলের ধারা। 

আঙ্গুর হুড়মুড়িয়ে গিয়ে বসে পড়লো তিন্নির কাছে।

"তিন্নি, এই তিন্নি, ওঠ মা কি হয়েছে বল।" চারপাশে তাকিয়ে চিৎকার করলো, "এই তোমরা হাত লাগাও। নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে, ওই.. কি হলো রে শুয়োরের বাচ্চা শুনতে পাচ্ছিস না! তোদের পায়ে পড়ি একটু হেল্প কর।" 

নাহ্ কেউ এলো না। 

বেলতলার পাশেই একটু দূরে একটা কালীপুজো হয়, অনেক বছরের পুরোনো আর বেশ বড়ো। 

লোকগুলো হয়তো পুজো দেখতেই এসেছিলো। কিন্তু মায়ের হাতে অসুরের নিধন দেখার থেকে হয়তো অসুরের হাতে মায়ের সম্মান হরণ দেখে বেশি মজা পেয়েছে। 

রাগে কষ্টে গা রিরি করে উঠলো আঙ্গুরের কিন্তু কাঁদলো না। 

পলু কে বললো, "তুই এখানে থাক আমি মন্দিরের কাছে যাই। 

ওখানে পুরুত কাকা আছে, যদি কিছু হেল্প করে।"

আঙ্গুর ছুট লাগালো মন্দিরের দিকে। পুরোহিত আশীষ বাবু প্রৌঢ় ভদ্রলোক, খুব ভালো মনের ও উপকারী। সবার সাথে সমান ভাবে ভালো ব্যবহার করা তাঁর গুণ। এখন সেই শেষ আশা আঙ্গুরের।

মন্দিরের কাছে আসতেই আঙ্গুরের সেই আশার আলো টাও যেনো দপ করে নিভে গেলো। 

হারু আর তার মাতাল দল চত্বরে গোল করে বসে যেনো তামাশা জুড়েছে। 

সেখান থেকে ভেসে আসছে আজকের শিকার কাহিনীর পৈশাচিক উল্লাস। "শালা কচি মাগী ছিলো। অমন টাইট মাল আগে ঠাপাইনি শালা। ওহ্" ..ভেসে এলো ওদিক থেকে। 

আঙ্গুর কানে হাত দিলো, মনে পড়ে যাচ্ছিলো ওর বিশ বছর আগের কথা, যখন এভাবেই রেপ করে ওকে বেচে দেওয়া হয়েছিলো কলকাতার এক বাজারে। 

সেই শব্দগুলো যেনো ফের প্রতিধ্বনি হয়ে চলেছে, আরো একবার। কিন্তু কানে হাত দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

" মাগীর নখরা দেখছিলি? এমন ভাব শালী যেনো সতি সাবিত্রী। রোজ রাতে তো দিস একদিন নাহয় হারুকে দিলি!"

"কি গুরু, মাসিকের মাগী কিন্তু আজ বউনি হলো, কি বলো?" আবার সেই অট্টহাসি..!

পেশী শক্ত হয়ে উঠলো আঙ্গুরের। 

কি জানি কি ভর করলো ওর উপর। শান্ত ভাবে এগিয়ে গেলো মন্দিরের দিকে। 

মা কে প্রণাম ঠুকে হাতে তুলে নিলো বলিদানের খাঁড়া টা। 

তারপর ধীরে ধীরে কখন যে ওই গোল করে বসে থাকা জানোয়ারদের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, মদের ঘোরে কেউ টের ও পায়নি। আশেপাশে যে কটা লোক ছিল তারাও যেনো স্তম্ভিত হয়ে গেছে। হারুর পিঠে পা দিয়ে একটা টোকা দিলো আঙ্গুর। 

হারু "কে রে শালা" বলে ঘুরে তাকাতেই একটা মসৃণ শান্ত হাসি দিলো আঙ্গুর আর তারপরেই.....

রক্তের উপর বসে খেলছিলো আঙ্গুর যখন পলু ছুটে এলো। 

শিশু যেমন কাদার উপর খেলে, ঠিক সেভাবে। "তিন্নি দিদির জ্ঞান ফিরেছে বড়মা।" 

কথা কানে গেলোনা আঙ্গুরের। 

আজ মায়ের যে তৃষ্ণা মিটেছে। পশুর রক্তের তৃষ্ণা। 

হাজার বছরের বলিদানে যা মেটেনি, যা মেটা উচিত ছিলো না, আজ মানব পশুর রক্তে তা শান্ত হয়ে গেছে।।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন