ভালোবাসা কি মরেনা!


তো , তোমার গার্লফ্রেন্ড কেমন আছে ?
হুম । ভালই । ওকে প্রায়ই তোমার কথা বলি।
কি বলো ?
বলি যে শুভ্রা নামের আমার এক ভাল বন্ধু আছে । খুব ভাল বন্ধু ।
তুমিতো এখনও তার সাথে আমার দেখাই করে দিলেনা !
আরে, দেব দেব। সময় করে একদিন দেব ।
----ওহ । তাহলে এখন ওঠা যাক , চলো ।
কথা গুলো শ্যামলী আর তার বন্ধু রাজীবের ।
একদিন বাসে দেখা হয়েছিল তাদের, তারপর থেকে বন্ধুত্ব।
রাজীব শ্যামলীকে বন্ধুর মত মনে করলেও শ্যামলী রাজীবকে মনে মনে খুব ভালবাসে তবে বলতে পারেনি।
রাজীব খুব সাদাসিধে হলেও শ্যামলী একটু চন্ঞল।
দুজনেই স্মার্ট এবং উচ্চশিক্ষিত ।
.
.
.
তারপর......
হঠাত্‍ একদিন রাজীব শ্যামলীকে ফোন করে বললো, "এই শ্যামলী, আজ বিকেলে একটু আসবে?"
কোথায় ?
পার্কের সামনে আসলেই হবে।
কখন ?
বিকাল ৫ টায় । দেরি করোনা তাড়াতাড়ি এসো ।
আচ্ছা ।
কোনদিন দেখা করার আগে শ্যামলীই রাজীবকে ফোন করত।
কিন্তু আজকে একটু ব্যতীক্রম ।
শ্যামলী আর কিছু ভাবতে পারল না, সে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে রেডি হয়ে নিল, তারপর ৪.৩০ টায় রিকশা ধরে চলে গেল ।
যাওয়ার পর দেখে পাঁচটা বেজে গেছে । শ্যামলী রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে বিদায় করতেই রাজীব এক কোন থেকে বেরিয়ে এলো ।
বলল -এত দেরি ?
আর বলোনা , রাস্তায় এত জ্যাম যে ঠিক সময় আসতে পারিনি ।
ঠিক আছে , চলো ।
কোথায়?
আরে , আমার উপর বিশ্বাস রাখো । চলো।
বলেই রাজীব শ্যামলীর হাত ধরে টেনে পার্কের বিপরীত পাশের কবরস্থানে নিয়ে গেল।
ডান দিকের তিন নম্বর কবরের পাশে থামলো সে। তারপর পকেট থেকে দুটো ধপকাঠি বের করে জ্বালিয়ে দিল কবরের পাশে ।
রাজীব হাটু গেড়ে বসল আর কবরের মাথায় হাত বোলাতে লাগল, ঠিক যেমন কোন মা তার সন্তানকে কোলে শুইয়ে দিয়ে তার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
শুভ্রা এতক্ষণ এসব দেখছিল ।
একসময় তার পাগলামীতে বিরক্ত হয়ে বলল - কি হচ্ছে এসব ? কি শুরু করেছো তুমি ? ওঠো বলছি । ওঠো ।
চুপ, কথা বলোনা , রিমি ঘুমোচ্ছে . . .
শ্যামলী নামটা শুনেই আঁতকে উঠলো । কারণ রিমি হলো রাজীবের গার্লফ্রেন্ডের নাম । শ্যামলীও বসে পড়ল । রাজীবের দিকে আঁড় চোখে তাকিয়ে নীরবে চোখের এক কোনায় অশ্রু ফেলতে লাগলো । এলমেলো চুলগুলোকেও সরানোর হুঁশ পেলোনা সে ।
রাজীব বলতে লাগলো . . .
রিমি , এই রিমি , এই । ওঠো । দেখো কাকে নিয়ে এসেছি । ঐ যে তোমাকে বলেছি না, শ্যামলী নামের এক ভাল বন্ধু আছে আমার । দেখো ও তোমার সাথে দেখা করতে চায় । এই ওঠোনা । ওঠো ।
শ্যামলী নীরবে কেঁদেই চলেছে । রাজীব রিমি রিমি করে ডেকেই যাচ্ছে । কোন সাড়া নেই ।
এক সময় চিত্‍কার দিয়ে শ্যামলী বলে উঠলো, রাজীব কি হচ্ছে  এসব? রিমি মারা গেছে । এটা শুধু তার কবর মাত্র । বলে শ্যামলী দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠল।
রাজীব চিত্‍কার করে বলতে লাগলো... না । রিমি মরেনি । রিমি মরবেনা । কে বলেছে রিমি মারা গেছে । রিমি ঘুমোচ্ছে । কেন তুমি চিত্‍কার করে ওকে জাগানোর চেষ্টা করছো ? ও আমাকে ভালবাসে আর আমিও ওকে ভালবাসি । আর আমার ভালবাসা কখনও মরতে পারেনা । পৃথিবীর সবাই মারা গেলেও আমি রিমি মুত্যুকে বিশ্বাস করিনা । রিমি মরেনি । তুমি মিথ্যা বলছো । মিথ্যা বলছো । একথা বলেই রাজীব বুকে হাত রেখে জোরে রিমির নাম ধরে ডেকে চিত্‍কার মেরে উঠলো ।
শ্যামলী শেষবারের মত রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলল - রাজীব আমিও তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি।
রাজীব এবার চিত্‍কার করে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল ।
এ্যাম্বুলেন্স এল...
৩ ঘন্টা পর...
হাসপাতালের বেডে রাজীবের পাশে শ্যামলী বসে আছে। হাতে রাখা গ্লাসটা রেখে শ্যামলী জিজ্ঞেস করলো - এখন কেমন লাগছে ?
কোন কথার উত্তর না দিয়েই রাজীব প্রশ্ন করল - শ্যামলী একটা কথা বলি ?
বলো।
আমি যে এখন হাসপাতালে এই খবরটা প্লিজ রিমিকে দিওনা । ও শুনলে হয়তো সত্যিই কষ্ট পাবে ।
শ্যামলী এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো । বলল - তুমি রিমিকে ভুলে যাও । রাজীব রিমি মারা গেছে ।
রাজীব আবার জোরে দিয়ে বলল - না । রিমি তুমি মরনি . একথা আমি জানি রিমি । তুমি যেখানেই যাও আমার ভালবাসা থেকে দুরে থাকতে পারবেনা কোনদিনও । রিমি তুমি ফিরে এসো । রিমি এসো সোনা। ফিরে এসো...
সমাপ্ত

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন