সকল প্রেমিক প্রেমিকার প্রতি

একজন মানুষ তার প্রিয়জনকে সারপ্রাইজ দিতে চায় কেন?
অবশ্যই প্রিয়জনের বিস্মিত চাহনি দেখার জন্যে, তাইতো?
আজ আপনাদের সাথে যে কথাগুলো বলব, সেগুল শোনার পর আপনার হয়ত মনে হবে এগুলো ত একদম ফালতু কথা! কিন্তু আমি বলছি এর অনেক দাম আছে আপনার সম্পর্ক ভাল রাখার জন্য।


মেয়েটার জন্মদিন, সে ভেবেছিলো সবার আগে ফোন করে উইশ করবে ছেলেটা।
কিন্তু কীসের কী! রাত তিনটে বাজে! কত্তো মানুষ এরই মধ্যে উইশ করে ফেলেছে অথচ ছেলেটার কোনো খবর নেই!

ঘুম ঘুম চোখে তবুও হা করে মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা।
প্রতীক্ষায় আছে প্রিয় মানুষটার ছোট্টো কোনো টেক্সটের, খুবই সাদামাটা কোনো উইশের।
সে কী আমার জন্মদিনের কথা ভুলে গেছে! এত্তো ভুলোমনা ছেলেটা!
আমি তাকে মনে করিয়ে দেবনা - এইসব ভাবতে ভাবতে ছেলেটার উপরে ভারী অভিমান হলো তার!

ঠিক এমন সময় ছেলেটা ফোন করল, মেয়েটা ঝাঁপিয়ে পড়ে রিসিভ করতেই ছেলেটা খুবই কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বললো "একটু ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতে পারবে প্লিজ? মোবাইলটা কান থেকে নামীওনা।"

মেয়েটা বারান্দায় ছুটে গেল, দু-তলার উপর থেকে নীচের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল!
১৫ জন শিশু হাসি হাসি মুখে এক সারিতে দাঁড়িয়ে, প্রত্যেকের হাতে এক একটা অক্ষর!
তারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ফুটিয়ে তুলেছে- "HAPPY BIRTHDAY SUMU"
তাদের সামনে বার্থডে কেক হাতে বোকা বোকা মুখ করে ছেলেটা দাঁড়িয়ে!

বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই মেয়েটার মোবাইলে ছোট্টো একটা টেক্সট পৌঁছে গেলো "You're the best thing that could ever happen to me. Thanks a lot for making me complete. Happy Birthday. আমার
অগোছালো জীবনটাকে গভীর মমতায় গুছিয়ে দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ, শুভ জন্মদিন।"

মেয়েটা ফোন কানে ধরেই রেখেছিলো, ছেলেটা নীচে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো- " Happy Birthday My Sweet Sumu' আজ সারারাত তোমায় গান শোনাবো, বেন ডোভার দিয়েই শুরু করি তাহলে?"

মেয়েটা কপট বিরক্তি দেখিয়ে বলা শুরু করলো "তুমি এতো বোকা কেন বলোতো? বাড়ির কেউ দেখে ফেললে!"
বলতে বলতেই তার দু'চোখ জলে ভরে উঠলো, গলা ধরে এলো!

সে তার কথা শেষ করতে পারলো না, মুক্তোর মতো এক ফোঁটা আনন্দাশ্রু টুপ করে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার গালে এসে পড়লো, এই অশ্রুবিন্দুর কোনো বিনিময় ছেলেটার জানা নেই, দুনিয়ার কোনো পুরুষেরই জানা নাই আসলে!


কিছুদিন আগে দেখলাম একটা সিনেমাতে ট্রল করে বলা হয়েছে "বহু মেয়ে আছে এমন যাদেরকে নিজের হৃৎপিণ্ড রান্না করে খাওয়ালেও নাক সিটকায়ে বলবে  "তরকারীতে লবণ কম হয়েছে!"
আসলেই কি তাই?
আমার কেন জানিনা মনে হয়, মেয়েরা তার প্রিয়জনের খুবই সাধারণ কাণ্ডকেও অত্যাশ্চর্য কারিকুরি ভেবে আহ্লাদিত হয়! পরিকল্পনাবিহীন বোকামিকেও সুনিপুণ কৌশল হিসাবে বিশিষ্ট করে।
একসাথে আইসক্রীম খাওয়ার সময় তার ঠোঁটের কোণে বেখেয়ালে লেগে যাওয়া আইসক্রীম আলতো করে মুছে দিলেই সে নিশ্চিত হয়ে যাবে এই ভেবে যে তার ব্যাপারে তার সঙ্গীর পূর্ণ মনোযোগ আছে!
অথবা রোজ সকালে অফিসে যাওয়ার আগে গভীর আবেগে তার কপালে চুমু খাওয়া, কর্মব্যস্ত দিনের ফাঁকে সামান্য ফুরসত মেলা মাত্র তার নম্বরে পাঠানো ছোট্টো টেক্সট "তোমাকে মিস করছি খুব।"

এক দম্পতির কথা শুনুন, স্ত্রী সব কাজে সিদ্ধহস্ত শুধু জুতোর ফিতে বাঁধতে পারে না!
প্রতিদিন সকালে স্বামীর সঙ্গে জগিংয়ে যাওয়ার সময় স্বামী তার কেডসের ফিতে বেঁধে দেয়!

স্বামী যখন গভীর মনোযোগে তার স্ত্রীর কেডসের ফিতে বাঁধে, স্ত্রী তখন হা করে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে "এইজন্যেই ইচ্ছা করে ফিতে বাঁধা শিখিনা, বুঝলে? নাহলে এক-একটা দিন বড্ড সাদামাটা ভাবে শুরু হতো!"

তুমি দেখতে কুশ্রী, গভীর আবেগে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারো না, হয়তোবা হাসলে গালে টোলও পড়ে না কিন্তু প্রিয় মানুষটার আবেগ কি তোমাকে ছুঁয়ে যায়? তাহলে নির্বিকার থেকো না, বিস্ময় গোপন করো না প্লীজ! উজাড় করে দাও।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন