Bengali Story - Bangla Short Story
রাত তখন ১১টা, শুনশান গলি .. । অফিস ফেরত মেয়েটি অন্ধকার গলিতে পা বাড়াল, এ গলি পেরিয়ে ডান দিকে দুটো গলি ছাড়িয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটলে তার বাড়ি । চুপচাপ, শুনশান চারদিক .. এইখানেই তো গলির দক্ষিণ কোনায় কতগুলো ছেলে রোজ আড্ডা মারে! তাহলে? .. সে এগোতে লাগল .. পায়ের প্রতিটি পদক্ষেপের শব্দ সারা এলাকা যেন শুনতে পাচ্ছে .. হঠাৎ...
..
.
নাহ! মশাই ! হঠাৎ কিছুই নয়, আপনি যা ভাবছেন তা একদম নয়! মেয়েটি বাড়ি পৌঁছাল।
মা বলল " কি রে মা! আজকেও এত দেরী করলি কেন, খাবার যে ঠান্ডা হয়ে গেল, আপিসে কাজের চাপ বেড়েছে?" ..
- আরে কি বলছো? রোজই তো এরকম সময়েই ফিরি, খেতে দাও তো! অত ভাবো কেন? "মেয়েমানুষ" হয়েছি কি করতে?
..
মেয়েটি খাওয়া সেরে ঘরে টিভি চালিয়ে .. ফ্যানের তলায় সোফায় গা এলিয়ে দিল ..। উফঃ এই সরকারি চাকুরি! কি ঝক্কির বাবা! আজকাল তো মেয়েরা সরকারি চাকরি না করলে বিয়ের জন্যে ছেলেই পাওয়া যাচ্ছে না! ... তাই কোন গতি না দেখে.. মা-বাবার অনুরোধে .. ইয়ে আর কি!
..
টিভিতে একটা নিউজ চ্যানেল দিয়ে সে মৌরি চিবোতে চিবোতে সেদিকে মনঃসংযোগ করল, কাল ১৫ই আগস্ট ছিল, ভারতের ৭২তম স্বাধীনতা দিবস, তাই বর্তমান প্রগতিশীল ভারতের কিছু ভালো ভালো খবর পরিবেশন করা হচ্ছিল .. মেয়েটি মন দিয়ে দেখতে লাগল ..
- " বর্তমানে ভারতে অর্থনৈতিক উন্নতির বিচারে চিনকেও পিছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বর প্রগতিশালী দেশ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে, ঘুষ, দুর্নীতি ,করফাকি, ট্রেনের টিকিট না কাটা বা অরাজনৈতিকতা দেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত হয়েছে, সমগ্র রাজনৈতিক দলগুলি দেশের স্বার্থে একত্রিত হয়ে একটি মাত্র দল গঠন করেছে, বিগত ২০ বছরে ভারতে একটিও ধর্ষণ ,নারী নির্যাতন, শিশুশ্রম কন্যাভ্রূণ হত্যার নিদর্শন মেলেনি, আজকাল সারা ভারতে ক্রাইমের percentage মাত্র ০.৫%, আজকাল পুলিশের সেরকম প্রয়োজনীয়তা পরছে না, শিল্প, গবেষণা, আর্ট, বিজ্ঞানে ভারত প্রভূত উন্নতি করেছে, সারা ভারতে বেকারের সংখ্যা বিলুপ্ত প্রায়, কেউ আর বেকারত্বের জ্বালায় বিগত ২০বছরে আত্মহত্যা করেনি, কোন খুব প্রতিভাশালী ব্যক্তিও বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে না, দেশের infrastructure এ একরকম নবজাগরণ আসায় ভারত সারাবিশ্ব থেকে সমাদৃত হচ্ছে, কৃষিবিদ্যায় নতুন টেকনোলজির ব্যবহারে বিশ্বে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, কোন চাষি বিগত ২০ বছরে অনাহারে থেকে আত্মহত্যা করেনি, ধর্ম-জাতি-বর্ন সব মিলেমিশে একাকার হয়েছে,সামাজিক ও শিক্ষা, ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সংরক্ষন প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে কারন অনগ্রসর জাতি আর অনগ্রসর নেই, সবাই সমান ।আজ খুব গর্বের দিন , শুভ স্বাধীনতা দিবস, সবাই এগিয়ে আসুন, আমরা ভারতকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাই ।"
- মেয়েটি টিভি বন্ধ করে ভাবতে শুরু করল ... কি অদ্ভুত আমাদের ভারতবর্ষ! অনেক ভাগ্য করে জন্মেছিলাম! কোন পারিবারিক চাপ নেই, প্রেমিকযুগল যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারে, কোন ধর্ম-জাতি-বর্ন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না ..
কেউ আর কার্টুন আকার জন্যে জেলে পুরে দেয় না, গণতন্ত্রের মুখ চেপে ধরে না, প্রত্যেকটি মানুষের সমান অধিকার, তুমি এটা খাবেনা, এটা বলবে না,এটা পরবে না, এটা করবে না, ওটা করবে না, কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, এখন তো ভারতে ৯৫% মানুষ শিক্ষিত, আর দারিদ্রসীমার নীচে মাত্র ২% মানুষ, প্রত্যেকটি মানুষ, সৎ, দেশপ্রেমী, কর্মঠ, নিষ্ঠাবান... একে অপরের সাহায্যে সর্বদা সক্রিয়। এ তো ভারতবর্ষে নয় যেন স্বর্গভূমি, একদিন সারাবিশ্বে স্বাধীনতার আক্ষরিক মানেই হয়তো ভারতবর্ষকে বোঝানো হবে ।
..
রাতে কখন যে ঘুম এসে গেছিল ... কে জানে! মেয়েটি সকালে উঠে তড়িঘড়ি অফিস ছুটল ... বাস স্ট্যান্ডে এসে চারপাশের পরিপাটি গোছানো চারপাশের পরিবেশটা তাকে প্রতিদিনের মতোই মুগ্ধ করল, চারদিকে গাছপালা ,চকচকে রাস্তা,কোথাও কোন নোংরা-আবর্জনা নেই... রাস্তার কোনায় ডাস্টবিনে মেয়েটি সদ্য শেষ হওয়া চিপসের প্যাকেটটি ফেলে এল ...হঠাৎ কোথা থেকে একটি লোক দৌঁড়তে দৌঁড়তে এসে ডাস্টবিনে ...."পিক!"
মেয়েটির দিকে লজ্জাতুর মুখে তাকিয়ে বলল "অনেকক্ষন ধরে মুখে জমে ছিল দিদিভাই,সেই কখন থেকে চিবোচ্চি, আর রাখতে পারছিলাম না,"
- মেয়েটি হেসে ফেলল ।
...
উপরের সবকিছু কেমন রূপকথার মতো লাগল তাই না? কিন্তু এই রূপকথাটাই বাস্তব হতে পারত যদি আমরা প্রত্যেকটি ভারতবাসী এরকম হতে পারতাম, সৎ, দায়িত্বশীল, কর্মঠ,দেশপ্রেমী ভারতীয় নাগরিক হতাম. ... আমাদের প্রচেষ্টাতেই এই রূপকথার মতো কথাগুলি বাস্তবায়িত হতে পারত । হ্যা! আমাদের ভারতবর্ষও স্বর্গ হতে পারত... কিন্তু।
Super
উত্তরমুছুনthnx, read others too
মুছুন