আমি আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আন্দামান গিয়েছিলাম।
আমার দিদি তখন লিটিল আন্দামানের হাট বে তে থাকত।
দিদি কলকাতা ঘুরতে এসেছিল।
দিদি কে পৌছে দিতে সস্ত্রীক গিয়েছিলাম।
যাওয়ার সময় জাহাজে গিয়েছিলাম এল টি সি তে প্রথম শ্রেনীর কেবিন পেয়েছিলাম এম ভি নিকোবর জাহাজে।
জাহাজটা তখন নতুন। আগে হর্ষবর্ধনের খুব নাম ডাক ছিল। জাহাজে চারদিন কেমন করে কাটবে সেই নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। শুনেছি সমুদ্রপীড়া তে অনেকের গা গোলায়, বমি করে।
বেশ কয়েকটা বই নিয়ে গিয়েছিলাম পড়ে সময় কাটাব বলে। জানুয়ারী মাস ছিল।
সমুদ্র তাউ শান্ত ছিল। যথা সময়ে দড়ির সিঁড়ি বেয়ে রোমাঞ্চিত হয়ে জাহাজে চড়লাম।
ডকে পৌছে ও বেশ শীত করছিল।
বিকেল বেলায় জাহাজে পৌছে ভিতর টাকে আমার একটা বেশ বড় হোটেল মনে হল। ঠান্ডা ও লাগছিল না।
নিজেদের কেবিনে এসে দেখলাম চারজনের কেবিন। আমাদের তিনজনের সাথে বাইরের এক ভদ্র লোক ছিলেন।
বয়স পঞ্চাশের মতন। ওখানে সার্ভিস করেন। খুব মিশুকে।
একসাথে থাকতে অসুবিধা হয় নি। ইন্টারনেটের প্রথম যুগের কথা। মোবাইলের আদিম দিনের কথা।
তাই কারো হাতে মোবাইল দেখি নি। থাকলেও লাভ হত না। তখনকার প্রযুক্তি অনুসারে কেবিনের ভিতর খুবই সাজানো।
চারটে সিঙ্গল বেড দুটো তলে। দুটো চেয়ার,,টেবিল এবং বসার টুল। আলমারি জামা কাপড় ও কাগজ পত্র রাখার জন্য।
মিউজিক সিস্টেম এবং পাবলিক আ্যড্রেস ব্যবস্থা বেশ ভালো ছিল।
জাহাজে খাওয়ার ডাইনিং রুম খুব সুন্দর।
সকালে আর দুপুরে খাওয়া ওখানেই ছিল।
রাতের ডিনার ঘরে। ডিনার খুব খারাপ হলেও ব্রেকফাস্ট খুব ভালো এবং পর্যাপ্ত ছিল।
খুব সুন্দর জাহাজের ভিতর টেবিল টেনিস ক্যারাম সহ ইন্ডোর গেমসের ব্যবস্থা ছিল।
সাগরে জাহাজ পৌছাতেই প্রায় একদিন।
জোয়ারের উপর নির্ভর করে। সাগর থেকে পোর্টব্লেয়ার অবধি প্রায় দুই থেকে আড়াই দিন লাগল।
ডেক থেকে সমুদ্র দেখে, সবার সঙ্গে গল্প করে সময় যে কি দারুণ কেটে গেল তা অবর্ণনীয়। ডেক থেকে আন্দামানের কালাপানি দেখলাম। সত্যি সাগরের রঙ যেন কালো।
আন্দামান থেকে নিকোবরের পথে সমুদ্রের জল কালো লাগে নি। মাঝে মাঝে ডলফিন দেখা যায় যদিও আমি দেখি নি।
সমুদ্রের থেকে সূর্যাস্ত খুব মনোরম। দারুণ উপভোগ্য ছিল সেই সফর। কোনো বমি হয় নি।
দূর থেকে পোর্টব্লেয়ারে যখন জাহাজের বন্দরে ঢোকার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়।
ফেরার পথে ক্লান্তি র সময় প্লেনে ফেরাই ভালো। আমরাও প্লেনে ফিরে ছিলাম।
তখন যদি স্মার্ট ফোন থাকত!
Anup Kumar Sengupta
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন